আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু আট মাস আগে ভারত-চীন সীমান্ত সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে অষ্ট্রেলীয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল এর কথা বার বার মনে পড়েছে। গতবছর ৯৩ বছর বয়সে তিনি মারা গেছেন। ১৯৬২ সালে সংঘটিত ভারত-চীন যুদ্ধের ওপর তাঁর লেখা ‘ইন্ডিয়া’স চায়না ওয়ার’ গ্রন্থটি তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি দিয়েছিল। কিন্তু বইটির কারণে ভারতে তিনি কঠোরভাবে সমালোচিত। গ্রন্থে তাঁর দেখানো ভারতের সামরিক দুর্বলতাগুলো ভারতের কোনো সরকার স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি এবং মিলিটারি হাইকমান্ড বিব্রত হয়েছে। কিন্তু চীন সরকার তাঁকে প্রশংসা করেছে। ১৯৭১ সালে বেইজিং এ এক সরকারি ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন লন্ডনের দ্য টাইমস রিপোর্টার অষ্ট্রেলীয় বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল। প্রধানমন্ত্রী ঝাউ এনলাই এবং পাকিস্তানি নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টো তাদের আসন থেকে ম্যাক্সওয়েলের টেবিলে আসেন এবং দোভাষীর মাধ্যমে বলেন, “মি: ম্যাক্সয়েল, আপনার বই…
Comments closedআনোয়ার হোসেইন মঞ্জু Posts
আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ফাতিমা ভূট্টোর বাবা, ফুফু ও চাচা সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানের বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য ফাতিমা তার নিকটজনের মৃত্যুর ঘটনা দেখে ও এ সম্পর্কে আলোচনা শুনে বড় হয়েছেন। মৃত্যু ও সংঘাত এই পরিবার থেকে কখনো খুব দূরে ছিল না। ২০০৭ সালে বেনজীর ভূটো যখন তাঁর তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীত্বের জন্য নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন তখন ফাতিমা তার ফুফুর প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সক্রিয় ছিলেন। ফুফুকে হত্যা করার খবর শুনে তিনি বিশ্বাস করতে পারেননি। তার মনে হয়েছে, আততায়ীরা আরেকজন ভূট্টোকে হত্যা করার সাহস করতে পারেনা। এক দশক আগে তার বাবা মর্তুজা ভূট্টোর হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে তিনি আবেগাপ্লুত হয়েছেন। তিনি তার “সঙস অফ ব্লাড এণ্ড সোর্ড” গ্রন্থে লিখেছেন, ‘পরবর্তী পাঁচদিন আমি শুধু কেঁদেছি। আমার অশ্রু যখন শেষ না হওয়া পর্যন্ত…
Comments closedখুশবন্ত সিংঅনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু সালমান রুশদীর ‘মিডনাইট’স চিলড্রেন’ পাঠ করার পর থেকে আমি তাঁর প্রতি সম্ভ্রম বোধ করেছি। তাঁর প্রতিভা আমাকে বিস্মিত করেছে এবং যারা তাঁর এ গ্রন্থটি পাঠ করেছে তারাও বিস্মিত হয়েছেন। সঙ্গত কারণেই এটি ‘বুকার পুরস্কার’ লাভ করেছে। গ্রন্থটির ওপর আমি আমার কলামে এটিকে আমার এ যাবত পাঠ করা সেরা উপন্যাস বলে প্রশংসা করেছি। রুশদী আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসেন এবং আমার সঙ্গে পান করেন। আমি অত্যন্ত আমোদিত বোধ করেছি। ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সবকিছু ভালোভাবে চলছিল। আমি বইটির পান্ডুলিপি পাঠ করি এবং এটির প্রকাশনা সংস্থা ইংল্যান্ডের পেঙ্গুইন ভাইকিং এর অনুরোধে আমি আরও দু’বার পাঠ করতে হয়েছে। ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ মুসলমানদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্রোধের সৃষ্টি করে। ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনি তাঁকে হত্যার জন্য ফতোয়া ঘোষণা…
Comments closedখুশবন্ত সিংঅনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু [খ্যাতিমান ভারতীয় সাংবাদিক, লেখক খুশবন্ত সিং ১৯৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর সাথে জিয়াউর রহমানের সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত প্রকাশ না করলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়ার বৈশিষ্ট্যের বৈপরীত্য সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। তিনি যখন তাঁর কাছে জানতে চান যে, বঙ্গবন্ধুর কোনো ঘাতককে কেন গ্রেফতার করা বা শাস্তি বিধান করা হয়নি, তাঁর প্রশ্নে তিনি কোনো মন্তব্য না করে অস্থিরভাবে হাতঘড়ির পিানে তাকাচ্ছিলেন।] শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দু’জনের সঙ্গেই আমার অনেকবার সাক্ষাৎ করার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার জানামতে শুধুমাত্র বাঙালি মুসলিম হওয়া ছাড়া তাদের উভয়ের মধ্যে আর কোনো বিষয়ে মিল ছিল না। মুজিবের উচ্চতা ছিল একজন বাঙালির গড় উচ্চতার চেয়ে বেশি, তাঁর ছিল শরীর মাংসল এবং পরনে থাকতো ঢিলেঢালা পোশাক। জিয়া আকৃতিতে…
Comments closedখুশবন্ত সিংঅনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জুলফিকার আলী ভূট্টো যাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন, তিনি আহমেদ রাজা কাসুরী। তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশে আঠারো বার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। আঠারোতম হত্যা প্রচেষ্টায় নিহত হন আহমেদ রাজার পিতা নওয়াব মোহাম্মদ রাজা কাসুরী’র। এ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ভূট্টোর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ভূট্টো যে আহমেদ রাজা কাসুরীকে তাঁর “অচেনা লোক” বলে বর্ণনা করেছিলেন, সেই ‘অচেনা লোক’টিই তাঁর জন্য কন্টকে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন অনলবর্ষী তরুণ, ধনবান জোতদার, আভিজাতসুলভ বৈশিষ্ট্যে জনতাকে উত্তেজিত করে সীমাহীন অভিলাষ পূরণে পারঙ্গম এক ব্যক্তি। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছয় ফুট উচ্চতা-বিশিষ্ট চাবুকের মত পেটানো শরীর আহমেদ রাজা কাসুরীর। উচ্ছসিত কণ্ঠে ‘ধাসসালামু আলাইকুম’ এর পর আন্তরিক করমর্দন শেষে তিনি তাঁর মুঠি থেকে হাত ছেড়ে দিলে আপনাকে হাত…
Comments closedখুশবন্ত সিংঅনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে আমার নেয়া অনেক রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে যিনি জনসংযোগে নিজেকে অত্যন্ত চৌকস প্রমাণ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক। তাঁর তথ্যমন্ত্রী অথবা জনসংযোগ অফিসাররা নয়, স্বয়ং তিনি যেসব মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তাদের ওপর উষ্ণতা ও শুভেচ্ছা স্থায়ী প্রভাব রেখে গেছেন। বিষয়টি আমি ব্যাখ্যা করছি। আমার বন্ধু এমএ রেহমান, যাকে আমি আমার লাহোরের দিনগুলো থেকে জানি, তিনি আমাকে লিখে জানান যে আমি জেনারেল জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই কিনা। সাথে সাথে আমি ইতিবাচক উত্তর দিলাম। অনেক কারণেই তিনি সংবাদ শিরোনাম ছিলেন। এর মধ্যে প্রধান কারণ ছিল তাঁর পূর্বসূরী জুলফিকার আলী ভূট্টোর মৃত্যুদণ্ডের রায়, যার ভাগ্য নির্ভর করছিল জেনারেল জিয়ার হাতে। আমার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছিল। একদিন আগে আমি ইসলামাবাদে পৌঁছলাম এবং আমাকে…
Comments closedখুশবন্ত সিংঅনুবাদ: আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু (ভূট্টো পরিবারের নিয়তি অপঘাত মৃত্যুর সাথে জড়িত। ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে জুলফিকার আলী ভূট্টোর মত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তাঁর পুত্র শাহ নওয়াজ ভূট্টোকে ১৯৮৫ সালে হত্যা করা হয় ফ্রান্সে। ্অপর পুত্র মীর মুর্তাজা ভূট্টো ১৯৯৬ সালে করাচিতে গুলিতে নিহত হন এবং ২০০৭ সালে রাওয়ালপিণ্ডিতে গুলির আঘাত ও বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন বেনজীর ভূট্টো)। জুলফিকার আলী ভূট্টোর নাতনি, মীর মুর্তাজা ভূট্টোর কন্যা ফাতিমা ভূট্টো তাঁর অনবদ্য রচনায় নিজের পরিবারের দু:খজনক ঘটনাগুলো তুলে আনলেও তাঁর প্রিয় দাদার বাড়াবাড়ির দিকগুলো কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। ফাতিমা ভূট্টোর লেখা “সংস অফ ব্লাড এণ্ড সোর্ড: এ ডটারস মেমোয়ার” ভূট্টো পরিবারের ইতিহাসের ওপর চমৎকার গদ্যে লেখা কাহিনি পাঠ করে যেকোনো মুগ্ধ হতে পারত, যদি না বইটি ভয়ঙ্কর সব চক্রান্ত, বিশ্বাসঘাতকতা, হিংস্রতা ও…
Comments closedআনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ইতিহাস অনেক কুখ্যাত শাসকের উত্থাপন ও পতন প্রত্যক্ষ করেছে, যারা তাদের ক্ষমতার নেশায় উন্মত্ত হয়ে ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার উদ্দেশ্যে জনগণের ওপর নজীরবিহীন নৃশংসতা চাপিয়ে দিয়েছিলেন। তারা অভ্যন্তরীণ ও বাইরের প্রতিপক্ষের ওপর কর্তৃত্ব বিস্তার ও তাদের বিদ্রোহের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করতে বর্বর আচরণ করে সম্ভাব্য সকল হুমকি থেকে নিজেদের অবস্থানকে নিরঙ্কুশ ও নিরাপদ করতে চেয়েছিলেন। অনেকে নিজের নামকে ইতিহাসে অমর করে রাখার বাসনায় সাম্রাজ্যের সবকিছুর নাম নিজের ও পরিবারের নামের সঙ্গে যুক্ত করেন। আধুনিক সময়ে নিরঙ্কুশ ক্ষমতাসম্পন্ন ও জননিপীড়নকারী, গণরায়ের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনকারী কোনো শাসককে উন্মাদ একনায়ক, স্বেচ্ছাচারী বলে চিত্রিত করা হলেও প্রাচীনকালে যে কোনো উপায়ে জনগণকে পদানত করে রাখা ও ভিন্ন রাষ্ট্রকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার সফলতার মাঝেই নিহিত ছিল শাসকের গৌরব ও স্বীকৃতি। সে…
Leave a Commentখুশবন্ত সিং-এর সাক্ষাৎকার অ্যাম্বরিশ কাথেওয়াড় দিওয়ানজি অনুবাদ : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু [ভারতের সাহিত্য ও সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র পরলোকগত খুশবন্ত সিং এর মতে, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জীবনের সেরা মুহূর্ত এবং সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করায় সহায়তা করা। যেভাবে তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন তা নজীরবিহীন, যখন তাঁর সকল দক্ষতা একসাথে জড়ো হয়েছিল। তিনি পাকিস্তানকে পুরোপুরি আহম্মকে পরিণত করেছিলেন। শরণাথী সমস্যা যখন চরমে পৌঁছে তখন তিনি তাঁর বিচক্ষণতার প্রমাণ দেন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এই অসামান্য বিজয়ে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘ভারত রত্ম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। খুশবন্ত সিং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যেমন নিবিড়ভাবে মিশেছেন ভারতের খুব কম সংখ্যক সাংবাদিকের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে। অধুনালুপ্ত ইংরেজি ম্যাগাজিন…
Leave a Commentঅনুবাদ : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মুক্তি ফৌজের অস্তিত্বের সূচনা ঘটে, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে পরিকল্পিত উপায়ে গণহত্যা শুরু করেছিল। মুক্তি ফৌজের সদস্য সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ হাজার। আজ এটি দেড় লাখের অধিক সংখ্যক নারী-পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত একটি সশস্ত্র গণবাহিনী- এটি জনগণের মুক্তিবাহিনীতে পরিণত হয়েছে এবং আরও লাখ লাখ মানুষ তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। শান্তিপ্রিয় বাঙালির আত্মায় কীভাবে এই লৌহের অনুপ্রবেশ ঘটল? ১২ নভেম্বর সকালে ‘সিটি অব সেন্ট অ্যালবানস’ নামে ব্রিটিশ পতাকাবাহী সাত হাজার টনের একটি কার্গো জাহাজ হুগলি নদীর মুখে কলকাতা বন্দরের উদ্দেশে অনেকটা খুঁড়িয়ে চলার মতো অগ্রসর হচ্ছিল। ওপরিভাগে স্টিলের পাতে মোড়া জাহাজের গায়ে সত্তরটি বিভিন্ন আকারের গর্তসহ কার্গো জাহাজটির বাইরের লাল রেখা পানি ছুঁইছুঁই অবস্থায় ছিল। পর দিন…
Leave a Comment