খুশবন্ত সিং-এর সাক্ষাৎকার
অ্যাম্বরিশ কাথেওয়াড় দিওয়ানজি
অনুবাদ : আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু
[ভারতের সাহিত্য ও সাংবাদিকতার উজ্জ্বল নক্ষত্র পরলোকগত খুশবন্ত সিং এর মতে, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জীবনের সেরা মুহূর্ত এবং সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল বাংলাদেশকে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত করায় সহায়তা করা। যেভাবে তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন তা নজীরবিহীন, যখন তাঁর সকল দক্ষতা একসাথে জড়ো হয়েছিল। তিনি পাকিস্তানকে পুরোপুরি আহম্মকে পরিণত করেছিলেন। শরণাথী সমস্যা যখন চরমে পৌঁছে তখন তিনি তাঁর বিচক্ষণতার প্রমাণ দেন। পরিস্থিতি সামলাতে না পেরে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এই অসামান্য বিজয়ে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে ‘ভারত রত্ম’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। খুশবন্ত সিং ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যেমন নিবিড়ভাবে মিশেছেন ভারতের খুব কম সংখ্যক সাংবাদিকের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে। অধুনালুপ্ত ইংরেজি ম্যাগাজিন ‘ইলাসট্রেটেড উইকলি অফ ইণ্ডিয়া’ ও ‘দ্য হিন্দুস্থান টাইমস’ এর সম্পাদক হিসেবে তিনি ইন্দিরা গান্ধীর ১৬ বছর দীর্ঘ শাসনকালের ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মুহূর্ত খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। খুশবন্ত সিং তাঁর মৃত্যুর দশ বছর আগে ২০০৪ সালে জবফরভভ.পড়স নিউজ এর সম্পাদক অ্যাম্বরিশ কাথেওয়াড় দিওয়ানজির সাথে এক সাক্ষাৎকারে সেই স্মৃতিচারণ করেন।]
দিওয়ানজি: ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর বিশ বছর পর আপনি তাঁর সঙ্গে আপনার স্মৃতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
খুশবন্ত সিং: ইন্দিরা গান্ধীর দুটি দিক ছিল। একটি রাজনীতিবিদের এবং অপরটি একজন মানুষের। রাজনীতিবিদ হিসেবে তাঁর সম্পর্কে সকলের সাধারণভাবে জানা আছে, কিন্তু একজন মানুষ হিসেবে তাঁর সম্পর্কে এবং তাঁর পরিবার ও কর্মচারিদের সম্পর্কে খুব কম সংখ্যক লোকই জানেন। বাদবাকি বিষয় সন্ধিক্ষণ ও যোগসূত্র এবং সকলকে তা বিশ্বাস করতে হয়।
দিওয়ানজি: আপনার সাথে কীভাবে তাঁর পরিচয় হয়েছিল?
খূশবন্ত সিং: তাঁর সঙ্গে যখন আমার পরিচয় হয় তখন তিনি অবিবাহিতা ছিলেন। কাশ্মীর যাওয়ার পথে তিনি লাহোরে আসেন। তিনি তাঁর বন্ধুদের সাথে ছিলেন, যারা তাঁকে সাথে নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের বাড়িতে তোলা তাঁর সাথে আমার একটি ছবি আছে। তিনি অত্যন্ত লাজুক ছিলেন এবং খুব বেশি কথা বলতেন না। পরবর্তী সময়ে তাঁর সাথে আমার দেখা হয় যখন তিনি কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। একটি সভায় তিনি সভাপতিত্ব করছিলেন এবং আমার যতদূর মনে পড়ে, আমি সেখানে ম্যাডাম ক্যামার (নারী নেত্রী ভিকাইজি ক্যামা) ওপর বক্তব্য দিচ্ছিলাম। এরপর তিনি যখন লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর সরকারে তথ্য ও বেতার মন্ত্রী হন তখন নিউইয়র্ক টাইমসের পক্ষ থেকে আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনার ওপর একটি নিবন্ধ লেখার জন্য। নিবন্ধটি তাঁর সম্পর্কে কিছুটা বিরূপভাবে লেখা হয়েছিল, কারণ এতে আমি কিছু লোকের উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম, যারা বলেছিলেন যে, তাঁর পক্ষে দেশের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব নয়। ভারত কখনো কোনো নারীর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়নি। আমাদের একজন রাজিয়া সুলতানা ছিলেন, কিন্তু সেই একবার। আমি একথাও বলেছিলাম যে শুধুমাত্র নেহরুর কন্যা হওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো যোগ্যতা নেই। বাস্তবেও পিতার কারণে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদে আসীন হওয়া ছাড়া তাঁর আর কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি ছিল না।
দিওয়ানজি: কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিই তো প্রধানমন্ত্রী হলেন ———
খুশবন্ত সিং: ঘটনা হলো, লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর পর জনগণ প্রধানমন্ত্রী পদে গুলজারীলাল নন্দা অথবা মোরারজি দেশাইকে চায়নি। অতএব তিনি প্রধানমন্ত্রী হন এবং যারা তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন তারা ভেবেছিলেন যে তারা তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবেন। কিন্তু এই লোকগুলো তাঁর জন্মগত রাজনৈতিক বোধ ও চেতনার সাথে পরিচিত ছিলেন না অথবা প্রধানমন্ত্রী পদের যে নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে তারা তা তারা খতিয়ে দেখেননি। প্রধানমন্ত্রী হয়েই তিনি মোরারজি দেশাই এবং কামরাজের মতো অন্যান্যদের কোনঠাসা করে ফেলেন। তিনি অনেকটা একনায়কের মতো শাসন করেছেন। লোকজন বলতো যে মন্ত্রীসভায় মাত্র এক লোক (ইন্দিরা গান্ধী) আছেন এবং বাকি সবাই হিজড়া। আসলে তিনি তাদেরকে ওই পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছিলেন।
দিওয়ানজি: তাঁর শাসনকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
খুশবন্ত সিং: তাঁর শাসনের ব্যাপারে আকর্ষণীয় তেমন কিছু নেই। তিনি কোনো ধরনের সমালোচনা সহ্য করতে পারতেন না। কিছু লোকের প্রতি তিনি ঘৃণা পোষণ করতেন, কারণ তিনি ভাবতেন যে তারা তাঁকে চ্যালেঞ্জ করছেন। তাদের মধ্যে জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো একজন ভালো ও সৎলোকও ছিলেন। তিনি তাঁকে সহ্যই করতে পারতেন না, কারণ তিনি একজন জাতীয় নেতা হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি বড় চ্যালেঞ্জ ছিলেন, বিশেষ করে তাঁর শাসনের ব্যাপারে যখন জনগণের মোহ ভঙ্গ হয়েছিল। দেশে নানা সংকট ছিল, খরা চলছিল এবং জয়প্রকাশ নারায়ণ একজজন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
ইন্দিরা গান্ধীর শাসনামলে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল। দুর্নীতির ব্যাপারে তিনি অতিমাত্রায় সহনশীল ছিলেন, যা তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি বড় নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছিল। তিনি ভালোভাবে অবগত ছিলেন যে তাঁর কিছু মন্ত্রী চরম দুর্নীতিপরায়ণ, তা সত্বেও যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের দুর্নীতির কারণে তাঁর কোনো ক্ষতি না হয়েছে ততেক্ষণ তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তিনি যদি কাউকে দুর্নীতিগ্রস্থ বলে জানতেন তবুও তাকে সহ্য করতেন। কিন্তু তাঁর ক্ষতির কারণ ঘটলে তিনি ওই ব্যক্তির খপ্পর থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনতেন। দুর্নীতির ব্যাপারে আসলে তাঁর জোরালো কোনো দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না, যে কারণে তাঁর সময়ে দুর্নীতি আকাশ ছঁয়েছিল। এছাড়া তিনি শিক্ষিত, মার্জিত লোকজদের সাথে স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন না। পার ফলে যশপাল কাপুর, তাঁর অফিসের স্টেনোগ্রাফার আরকে ধাওয়ান এবং তাঁর পেছনে ঘুরঘুর করে বেড়ানো মোহাম্মদ ইউনুসের মতো লোকজনের উত্থান ঘটেছিল। আমার বিশ্বাস, তাঁর প্রকৃত কোনো শিক্ষা না থাকার কারণেই এমন হয়েছিল। তিনি শান্তি নিকেতনে গিয়েছিলেন, এরপর বিদেশে ব্যাডমিন্টন স্কুলে যান, সেখান থেকে যান অক্সফোর্ডে। কোনো জায়গায় তিনি কোনো পরীক্ষায় পাস করেননি অথবা কোনো ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। আমার মনে হয়, একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে স্বীকৃত না হওয়ার কারণে তাঁর মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা বোধের সৃষ্টি হয়েছিল। তিনি অনেক বই পড়েছেন বলে ভান করেন। তিনি ফরাসি ভাষায় কথা বলেন, যা তিনি শিখেছিলেন তাঁর অসুস্থ মা কমলার সাথে সুইজারল্যাণ্ডে অবস্থানের কারণে, এটি তাঁর পক্ষে গেছে। সবকিছুর ভালো ও মন্দ দিক রয়েছে, কিন্তু ইন্দিরা গান্ধীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ এবং যাদের অতীত স্বচ্ছ ও গৌরবের তাদের সাহচর্যে তাঁর মধ্যে এই নিরাপত্তাহীনতার বোধ কাজ করতো। দ্বিতীয় স্তরের লোকজনের সাথে তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করতেন।
দিওয়ানজি: তাঁর এই নিরাপত্তাহীনতার বোধ সম্পর্কে অনেক লেখালেখি হয়েছে, এর ফলে ভারতের কতোটা ক্ষতি সাধিত হয়েছে?
খুশবন্ত সিং: তিনি নিরাপত্তা বোধ করতে পারেনি বলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলেছিলেন। সামর্থ ও যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে তিনি তাঁর সমর্থকদের পার্লামেন্টে জড়ো করেছিলেন; বিচারপতিদের ডিঙিয়ে তাঁর অনুগতদের ওপরে বসিয়েছেন; তিনি সিভিল সার্ভিসকে দুর্নীতিগ্রস্থ করেছেন। পক্ষপাতিত্ব ও আনুকূল্য প্রদর্শন তাঁর কাছে খেলার মতো হয়ে গিয়েছিল। তিনি জানতেন যে লোকজনকে কীভাবে পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে হবে এবং এ ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত কুশলী ছিলেন। তিনি কারও পৃষ্ঠপোষকতা করতেন, কিন্তু যখন তাঁর মনে হতো যে লোকটি বড় কিছু হয়ে যাচ্ছে তখন তাকে উর্ধ্বতন কোনো পদে নিয়োগ করার পরিবর্তে তাকে তাঁর ঘনিষ্ট সহযোগী পদে নিয়োগ করতেন। কারণ তিনি জানতেন এর ফলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বে সূচনা হবে। এর সবচেয়ে ভালো দৃষ্টান্ত হচ্ছেন ভিপি সিং। তাঁর বড় ভাই এসবি সিংকে মন্ত্রী পদে নিয়োগ করা হবে বলে ধারণা করা হবে। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী বেছে নিলেন ভিপি সিংকে, যিনি তাঁর বড় ভাইয়ের চেয়ে কম যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করার জন্যই এটি করা হয়েছিল। অত্যন্ত চিন্তাভাবনা ও হিসাব কষে তিনি কাজটি করেছিলেন এবং এই দরকষাকষিতে দুই ভাই পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হন এবং তাদের পরিবার ভেঙে যায়। কিন্তু সুদূর প্রসারী চিন্তা করলে দেখতে পাবেন তিনি যে খেলঅ শুরু করেছিলে তা দেশের জন্য ভালো ছিল না।
দিওয়ানজি: ইন্দিরা গান্ধীর সবচেয়ে বড় সাফল্য কী?
খুশবন্ত সিং: যেভাবে তিনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন সেটিই ছিল তাঁর জীবনের সেরা মুহূর্ত এবং সবচেয়ে বড় অর্জন ও বিজয়, যেখানে তাঁর সকল দক্ষতা একসাথে জড়ো হয়েছিল। তিনি পাকিস্তানকে পুরোপুরি আহম্মকে পরিণত করেছিলেন। সীমান্ত পেরিয়ে বন্যার তোড়ের মতো প্রবেশকারী শরণার্থী নিয়ে ভারত বিরাট এক সংকটে পড়ে গিয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা করেন এবং দুনিয়া জুড়ে সফর করে বিশ্ববাসীকে জানান যে কী ঘটে চলেছে। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ছাড়া তিনি আর কারো পক্ষ থেকে সাড়া পাননি। সোভিয়েত ইউনিয়ন যে কোনো কারণে আমাদের সাথে ছিল। যখন তিনি উপলব্ধি করলেন যে, সংকট চরমে পৌঁছে গেছে, তখন তিনি তাঁর বিচক্ষণতার প্রমাণ দেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে আমরা ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করার ঘটনার কথা বলতে পারি। এখন আমরা জানি যে, বিমানটিকে লাহোরে অবতরণ করানোর পরিকল্পনা ভারতীয়দেরই ছিল। এরপর লাহোরে পাকিস্তানের ওই সময়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো নিজের মূর্খতা প্রমাণ করেন তাঁর উপস্থিতিতে বিমানটিকে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ দিয়ে। ভারতের ওপর দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান ও তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ করার জন্য এ ঘটনাকে অজুহাত হিসেবে দেখানোর প্রয়োজন ছিল ভারতের। এর ফলে বোঝা যাচ্ছিল যে যুদ্ধ নিকটবর্তী হচ্ছে। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য তাদের বিমানগুলোকে ভারতের আকাশ সীমা এড়িয়ে ঘোরাপথে ওড়ে শ্রীলঙ্কায় নেমে বিমান রিফুয়েল করতে হচ্ছিল। আমার এটাও মনে হয় যে তাঁর পরামর্শেই ভারতীয় সেনাবাহিনী মুক্তি বাহিনী গড়ে তুলেছিল।
পাকিস্তানের তখনকার প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান যখন কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে পেরে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন, আমার মনে হয় ওই সময়ের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশের ১০০ মাইল ভেতরে ছিল। দুই সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানিরা শহরগুলোকে প্রতিরক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিল; কিন্তু ভারতীয় সৈন্যরা শহরগুলো এড়িয়ে সোজা ঢাকার উদ্দেশে এগিয়ে যাচ্ছিল। সকল বিচার বিশ্লেষণে এটি ছিল তাঁর ‘মহাকৌশল’ এবং সঙ্গত কারণেই তিনি ‘ভারত রত্ম’ উপাধি লাভ করেছেন।
দিওয়ানজি: কিন্তু এমন একটি উচ্চতায় ওঠার বড় বিপদ হলো সেখান থেকে নিচে নেমে আসা। এরপরই এসেছিল জরুরী অবস্থা।
খুশবন্ত সিং: জি হ্যাঁ, একথা সত্য। জরুরী অবস্থার প্রসঙ্গ যেহেতু এসেছে, সেজন্য আমাকে বলতে হয়, বিরোধী দল অত্যন্ত দায়িত্বহীন ও উন্মত্ত আচরণ করছিল। সন্দেহ নেই যে, দেশ দ্রুত বিশৃঙ্খলার চরম অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছিল। স্কুলগুলো বন্ধ ছিল, কলেজগুলো খুলছিল না, বিশাল বিশাল মিছিল হচ্ছিল, দাঙ্গার ঘটনা ঘটছিল। আমার মনে হয় জয়প্রকাশ নারায়ণ তাঁর নেতৃত্বে নয়া দিল্লিতে বিরাট এক মিছিল পরিচালনার সময় আইন প্রনেতাদের ঘেরাও করা ও তাদেরকে অফিসে যেতে না দেয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানিয়ে সবচেয়ে বড় ভুল করেছিলেন; ঠিক ওই সময়ে গুজরাটে এ ঘটনা ঘটেছিল ‘নবনির্মাণ আন্দোলনের’ সময় এবং জনতা গুজরাট বিধানসভার সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়েছিল। নয়া দিল্লিতে পার্লামেন্টের ক্ষেত্রেও তিনি জনগণকে তা করতে বলেন, যাতে নির্বাচিত লোকজন তাদের দায়িত্ব পালন করতে না পারে। এর চেয়ে বাজে ঘটনা ছিল আইন প্রনেতাদের অপসারনের জন্য পুলিশ ও সেনা সদস্যদের প্রতি তাঁর আহবান। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের একটি সীমা রয়েছে এবং ভারতে উদ্ভুত পরিস্থিতি সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। অন্যান্য নেতাও ছিলেন, আপনি তাদের সবার নাম বলতে পারেন, যারা ইন্দিরা গান্ধীর অস্বস্থি ও অসহায়ত্ব উপভোগ করছিলেন। তারা ভাবছিলেন যে আপনা-আপনি তাঁর পতন ঘটবে।
আমি জয়প্রকাশ নারায়ণকে একটি চিঠি লিখেছিলাম। আমি তাঁকে জানতাম এবং ভক্ত হিসেবে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতাম। কিন্তু আমি তাঁকে এই মর্মে লিখি যে তিনি একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়মকানুন অমান্য ও লঙ্ঘন করছেন। উত্তরে তিনি একটি দীর্ঘ চিঠি লিখেন এবং আমি তাঁর সেই চিঠি ‘দ্য ইলাসট্রেটেড উইকলি’তে প্রকাশ করেছি। কিন্তু অন্য কোনোকিছু ঘটার আগে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় ঘোষিত হয় এবং তিনি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেন। আমার মনে হয় তাঁর সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, কারণ জরুরী অবস্থা ঘোষণা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।
দিওয়ানজি: এতোগুলো বছর কেটে যাওয়ার পর আপনি কি বিশ্বাস করেন যে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা সঙ্গত ছিল?
খুশবন্ত সিং: আমি এখনও বিশ্বাস করি যে তিনি যখন জরুরী অবস্থা আরোপ করেন তাঁর সকল অধিকার ছিল তা চাপিয়ে দেয়ার। কারণ বিরোধী দলের নেতারা জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী, দায়িত্বহীন ও উন্মত্ত আচরণ শুরু করেছিলেন এবং তাঁর অসহায়ত্ব দেখছিলেন দর্শকের মতো। আমার পরিস্কার মনে আছে যখন জরুরী অবস্থা জারি করা হয় তখন দেশজুড়ে সাধারণভাবে স্বস্থির ভাব নেমে এসেছিল। স্কুল-কলেজগুলো আবার চালু হয়, ট্রেনগুলো সময়মত চলাচল শুরু করে এবং দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসায় সর্বত্র জনগণের মধ্যে কৃতজ্ঞতার বোধ পরিলক্ষিত হয়।
একথা ঠিক যে জনগণের স্বাধীনতা নিয়ে নেয়া হয়েছিল। আমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে গণমাধ্যমের ওপর কড়াকড়ি আরোপ না করা জন্য বলেছি। আমি তাঁকে বলি যে, আমার মতো আরও অনেক লোক যারা তাঁকে সমর্থন করেন। কিন্তু আমাদের কথা কেউ বিশ্বাস করেনি, বরং বলেছেন যে আপনি যদি কিছু বলেন তাহলে আপনাকে কারারুদ্ধ করা হবে। কিন্তু তিনি আমার কথায় সম্মত না হয়ে বলেছিলেন যে, জরুরী অবস্থা থাকবে এবং একই সাথে সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও থাকবে তা হতে পারে না। এতে বরং সমস্যা আরও বৃদ্ধি পাবে। আমার মনে হয়েছিল তিনি আমাকে কারাগারে পাঠাবেন। কিন্তু তিনি তা করেননি সম্ভবত এর কারণ ছিল আমি দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাঁকে ও তাঁর পুত্র সঞ্জয়ের পক্ষে লিখেছি। যাহোক, শেষ পর্যন্ত তিনি জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার করেন। কারণ সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেষ্টিগেশন) তাঁকে বিভ্রান্তিকরভাবে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিল যে দেশে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পরবর্তী নির্বাচনে তিনি জয় লাভ করবেন। যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো তিনি হতবাক হলেন যে দেশজুড়ে তাঁর প্রতি মানুষের প্রচণ্ড ঘৃণার কারণে তিনি পরাজিত হযেছেন।
দিওয়ানজি: আপনি বলেছেন যখন তিনি জরুরী অবস্থা জারি করেন তখন দেশের মানুষের মধ্যে স্বস্থি এসেছিল। তা সত্বেও তিনি নির্বাচনে পরাজিত হন। এর কারণ কী ছিল?
খুশবন্ত সিং : আমার ধারণা এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল কিছু লোকের ক্ষমতার অপরব্যাবহার —।
দিওয়ানজি: তাদের মধ্যে কি সঞ্জয়ও ছিলেন?
খুশবন্ত সিং: আপনি সঞ্জয়ের কথা বলছেন, তাঁর কোনো বৈধতা ছিল না। তিনি শুধু প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ছিলেন। সঞ্জয় তাঁর মনে যা পোষণ করতেন তা সর্বাংশে সঠিক ছিল। পরিবার পরিকল্পনার কোনো প্রচারণা কাজে লাগছিল না। অতএব তিনি এ কাজটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিযেছিলেন। এরপর আসে বস্তি উচ্ছেদ প্রসঙ্গ। লোকজন আদালতে মামলা ঠুকে দেয় এবং বছরের পর মামলা চলতে থাকে। সঞ্জয় বস্তি গুড়িয়ে দিতে বলেন। কিন্তু বস্তিবাসীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেন। পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর সাথে জড়িত কাহিনিগুলো অতিরঞ্জিত: লোকজনকে সিনেমা হলের টিকেটের লাইন থেকে ধরে আনা হয়েছে, গ্রামে জবরদস্তি ভ্যাসেকটমি করানো হয়েছে, ইত্যাদি মাত্র এক দশমাংশ সত্য। কিন্তু এসব কাহিনি দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল এবং এর খেসারত দিতে হয়েছে ইন্দিরা গান্ধীকে। জরুরী অবস্থাকে দানবে পরিণত করা হয়েছিল।
দিওয়ানজি: জরুরী অবস্থাকে দানবে পরিণত করার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ ছিল?
খুশবন্ত সিং: তিনি এতো অধিক সংখ্যক লোককে কারাগারে আটকে রেখেছিলেন, যাদের মধ্যে ৮৫ বছর বয়সের বৃদ্ধও ছিলেন। কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বললেই সোজা কারাগার। কিন্তু এজন্য তিনি একা দায়ী ছিলেন না। সঞ্জয় ও তাঁর স্ত্রী মানেকা, তাঁর শাশুড়িও দায়ী ছিলেন। দাঙ্গা বাঁধানোর পেছনে ছিলেন মোহাম্মদ ইউনুস। কেউ কিছু বললেই তিনি হঠাৎ নিজেকে কারাগারে আটকাবস্থায় দেখতেন।
দিওয়ানজি: যদি জরুরী অবস্থা ও কঠোর আইনের প্রয়োগ বিদ্যমান থাকে, তাহলে এ ধরনের বাড়াবাড়ি তো অনিবার্যভাবেই ঘটবে।
খুশবন্ত সিং: তা সত্য। কিন্তু আমার মনে হয় না যে ইন্দিরা গান্ধী তা উপলব্ধি করেছিলেন।
দিওয়ানজি: সম্ভবত সমস্যা শুরু হয়েছিল প্রথমত জরুরী অবস্থা জারির কারণে, দ্বিতীয়ত: এতো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তা বহাল রাখার কারণে।
খুশবন্ত সিং: আমারও মনে হয় জরুরী অবস্থা যদি স্বল্পস্থায়ী হতে তাহলে তিনি পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে সামলাতে পারতেন। যখন তিনি বুঝতে পারেন যে লোকজন জরুরী অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করছে তখন তিনি জরুরী অবস্থা তুলে নিতে পারতেন। তাঁর চারপাশের লোকজনই জরুরী অবস্থার অপব্যবহার করছিলেন। জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবী এবং গোয়ালিয়রের মহারাণি বিজয়া রাজে সিন্ধিয়ার মতো শ্রদ্ধাভাজনদের পকেটমার ও বেশ্যাদের সাথে কারাগারে রেখে ইন্দিরা গান্ধী শুধু তাঁর চরিত্রের প্রতিহিংসাপরায়ণ বৈশিষ্ট্য উন্মোচন করেছিলেন। এর ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাঁর অসংখ্য দুশমন সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে তাঁর পরিবারের প্রতি ঘৃণার বোধ দানা বেঁধে ওঠে।
দিওয়ানজি: আপনি কি মনে করেন না যে বিচারপতি সিনহা যখন তাঁর বিরুদ্ধে রায় দেন তখন তাঁর পদত্যাগ করা উচিত ছিল?
খুশবন্ত সিং: এটি অত্যন্ত সংশয়পূণ রায় ছিল: তিনি পার্লামেন্টে বসতে পারবেন, কিন্তু ভোট দিতে পারবেন না। ইন্দিরা গান্ধীর আইনজীবী ছিলেন ননী পালকিওয়ালা, যিনি তাঁকে বলেন যে আপিল করলে তিনি সহজে মামলায় জিতে যাবেন। এই রায়কে তিনি বর্ণনা করেন একটি ছোট ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে কাউকে আটকে রাখার মতো। কিন্তু ইতোমধ্যে ইন্দিরা গান্ধী বেশ বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন এবং সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় ও সঞ্জয় গান্ধীর মতো লোকজন তাঁকে পরামর্শ দেন জরুরী অবস্থা জারি করার জন্য। আমার বিশ্বাস, তিনি যা করেছিলেন যদি তা করতেন তাহলেই বরং তিনি আরও সেরা ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে পারতেন। জরুরী অবস্থা জারি করার পর পালকিওয়ালা তাঁর মামলা লড়তে অস্বীকার করেন। তাঁর চামচারা পালকিওয়ালাকে হেনস্থা করে এবং তাঁকে টাটা কোম্পানির বিভিন্ন বোর্ড থেকে অপসারণ করা হয়। এ ধরনের প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ করার ঘটনা ঘটতে থাকে, যা আরও অধিক সংখ্যক দুশমন সৃষ্টিতে অবদান রাখে, যা তাদের করা উচিত হয়নি।
দিওয়ানজি: কিন্তু তিনি আবার ক্ষমতায় ফিরে আসেন। এর কারণ কি জনতা পার্টির সরকারের অদক্ষতা অথবা লোকজনের এমন মনোভাবের কারণে যে, ‘ঠিক আছে, আমরা আপনাকে যা শাস্তি দেয়ার তা দিয়েছি, এখন আমরা চাই আপনি আবার ফিরে আসুন! অথবা এই দুটি কারণের সমন্বয়ের ফলে?
খুশবন্ত সিং: জি, হ্যাঁ, আমার মনে হয় আপনার কথাই ঠিক। এ সময়ের মধ্যে তাঁর প্রতি মানুষের রাগ ও বিদ্বেষ কেটে গিয়েছিল। মোরারজি দেশাই ও চরন সিং প্রমাণ করেছিলেন যে পরিস্থিতি সামলাতে তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ এবং জনগণও বলছিল যে এই লোকগুলোর চেয়ে ইন্দিরা গান্ধী অনেক ভালো ছিলেন।
দিওয়ানজি: কিন্তু তাঁর পরবর্তী কয়েক বছরের শাসনকাল কি শোচনীয় ছিল না? আগে তাঁর উদ্দেশ ও লক্ষ্যের মধ্যে যে শক্তি ছিল বলে মনে হয়েছে, তা তাঁর মাঝে আর অবশিষ্ট ছিল না।
খুশবন্ত সিং: আমার মনে হয় সঞ্জয় গান্ধীর মৃত্যুর পরবর্তী সময় থেকে তা চিহ্নিত করা যেতে পারে। ১৯৮০ সালে তিনি দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের কম সময়ের মধ্যে সঞ্জয় মারা যান। তিনি তাঁর আশ্রয় হারিয়ে ফেলেছিলেন, কারণ তাঁর ওপর সঞ্জয়ের বিরাট প্রভাব ছিল। তিনি প্রকৃত অর্থেই প্রভাব সৃষ্টি করার মতো ব্যক্তিত্ব ছিলেন এবং ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে নিশ্চয়ই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। এ ব্যাপারে তিনি রাজীবকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করেছিলেন, কারণ তিনি তাঁকে ‘বুদ্ধু’ বলে ভাবতেন। সঞ্জয়ের মৃত্যুর পর তিনি হতোদ্যম হয়ে পড়েছিলেন। কোনো কাজে মন বসাতে পারতেন না এবং ভেঙে পড়েছিলেন। রাতে তিনি ঘুমাতে পারতেন না, তাঁর বাসভবনের বাগানে পায়চারি করতেন, তাঁর চোখের নিচে কালো দাগ স্থায়ী হয়ে গিয়েছিল এবং তাঁর এই অস্থিরতার তাঁকে অপারেশন ব্লু-ষ্টারের দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
দিওয়ানজি : আপনি কি মনে করেন যে অপারেশন ব্লুষ্টার তাঁর ভুল সিদ্ধান্ত ছিল?
খুশবন্ত সিং: আমার বিশ্বাস তাঁকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। তাঁর নিজস্ব বিচার-বিবেচনা সঠিক ছিল বলে মনে হয়। তাঁর মধ্যে কোনো পক্ষপাত বা সঙ্কীর্ণতা ছিল না। তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে, শিখদের বিরুদ্ধে অথবা অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন না। লোকজনের সাথে তিনি পরামর্শ করতেন এবং বিভিন্ন লোকের কাছে পরস্পরবিরোধী পরামর্শ লাভ করতেন। তিনি প্রেসিডেন্ট জৈল সিংকে বিশ্বাস করতেন না, কারণ জৈল সিং উভয় দিকে তাল মেলাতেন। অনেক সময় তিনি পাঞ্জাবের তখনকার কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী দরবারা সিংয়ের বিরুদ্ধে জর্নাইল সিং ভিন্দ্রালওয়ালেকে সমর্থন করেছেন। এ পরিস্থিতিতে তিনি সেনাবাহিনীর দিকে ফিরেন এবং আমি নিশ্চিতভাবে জানি, সেনাবাহিনীর আপত্তি সত্বেও জেনারেল অরুণ বৈদ্য ও লে: জেনারেল কেএস সুন্দরজির মতো লোকজন তাঁকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, সেনাবাহিনী যদি সেখানে যায় এবং স্বর্ণমন্দির ঘেরাও করে তাহলে কোনো সংঘর্ষ হবে না এবং ভিন্দ্রানওয়ালে আত্মসমর্পণ করবেন। আমার মনে হয় তারা এমন কথাও বলেছিল যে দুই ঘন্টার মধ্যে অপারেশন শেষ হবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
ভিন্দ্রানওয়ালে একজন অপরাধী, উগ্রপন্থী গোঁড়া ছিলেন এবং সেই উগ্রতা নিয়েই তিনি যুদ্ধ করেছেন, ধরা দেননি। সংঘর্ষ দুই ঘন্টার পরিবর্তে দুই দিন দুই রাত ধরে চলেছে এবং হতাহতের সংখ্যা ছিল বিপুল। আমি এটাও জানি যে দুই বা তিন দিন পর তিনি যখন স্বর্ণমন্দির পরিদর্শন করতে যান তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। কারণ তখনও সরোবরে মৃতদেহ ভাসছিল, রক্তের দাগ তখনও মোছা হচ্ছিল। তিনি মেজর জেনারেল কেএস ব্রা’র এর দিকে ফিরে প্রশ্ন করেন, “এসব কী?”
কোনো সংঘর্ষ হবে না বলে সেনাবাহিনী তাঁকে যে কথা বলেছিল তিনি তা বিশ্বাস করেছিলেন।
Comments