Skip to content →

দেওয়ানবাগী পীরের সাথে আমার ছোহবত

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

ধর্ম যে লাভজনক ব্যবসায়ের বড় পন্য হতে পারে দেওয়ানবাগীর পীর তা প্রমাণ করে অবশেষে মারা গেছেন। পীর-ফকিরীতে আমার কোনো বিশ্বাস নেই। দেওয়ানবাগীর পীরের প্রতিও আমার কোনো বিশ্বাস ছিল না। তা সত্বেও এই একজন পীরকেই ব্যক্তিগতভাবে জানার সুযোগ হয়েছিল। তার সাথে যে আমার শুধু পরিচয় ছিল তা নয় বলা যায়, একটি সময় পর্যন্ত তার সাথে আমার কিছু সখ্যও ছিল। শেখ সা’দীর একটি বয়েত আছে, “ছোহবতে সালে তোরা সালে কুনাদ, ছোহবতে তালে তোরা তালে কুনাদ” (সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎসঙ্গে সর্বনাশ)। কিন্তু তার ছোহবতে আমার মধ্যে কোনো আছর হয়নি এবং আমি অসৎ হইনি। তখন তিনি পীর হয়ে ওঠেননি। আমি তার জাহেরি বিষয়ের কিছু জানি, বাতেনি বিয়য়ে কিছুই জানি না। আল্লাহ আমাকে কারও বাতেনি বিষয়ে জ্ঞান দিয়ে সমৃদ্ধ করেননি। আমার যতটুকু দুনিয়ারি এলেম আছে তাতে মনে হয়েছে তিনি ধর্মকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছেন। আল্লাহ তার পাপের কী শাস্তি দেবেন তা পুরোপুরি তাঁর এখতিয়ার। বহু মানুষের মৃত্যুতে অভ্যাসবশত আমি তাদের পরকালীন শান্তি কামনা করি, জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দেয়ার জন্য দোয়া করি। তার মৃত্যু খবর জানার পর আমি তার জন্য সে দোয়াও করিনি। আমার দোয়ায় কখনও কোনো কাজ হতে দেখিনি। অন্য কারও দোয়ায় কাজ হয় কিনা জানি না। এক খ্যাতিমান উর্দু কবি লিখেছেন: “গর আছর হ্যায় দোয়া মে মসজিদ হিলা কে দিখা/গর নাহি, তো দো ঘুঁট পি, আউর মসজিদ কো হিলতা দেখ” (দোয়ার যদি এতই ক্ষমতা থাকে, তাহলে মসজিদটা কাঁপিয়ে দেখাও/আর যদি না থাকে, তাহলে দুই চুমুক মদ পান করো এবং মসজিদকে কাঁপতে দেখো)।

ইসলাম সম্পর্কে মানুষকে গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট করার পাপ ক্ষমাযোগ্য কিনা তাও জানি না। বহু মানুষকে তিনি গোমরাহ করেছেন। এজন্য তাকে এককভাবে দোষ দিয়েই বা কী লাভ। মানুষ বিভ্রান্ত হয় কেন? মূর্খ মানুষজন বিভ্রান্ত হতে পারে, শিক্ষিত লোকজন কেন হবো? কেউ বিভ্রান্ত হতে চাইলে আল্লাহরই কী দোষ! করেছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, “আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার জন্য তুমি কোনো অভিভাবক বা পথ প্রদর্শনকারী পাবে না” (সুরা আরাফ: ১৭৮)। আরেক স্থানে আছে, “আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে আর সঠিক পথে পরিচালিত করেন না। এ ধরনের লোকদের কেউ সাহায্য করতে পারেন না” (সুরা নাহল: ৩৭)। এ সংক্রান্ত একটি হাদিসও রয়েছে, যেখানে নবী মুহাম্মদ (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না” (মুসনাদে আহমাদ)। “আল্লাহর নিয়ম হলো, যারা তাদের বিবেককে কাজে লাগিয়ে, বুদ্ধি প্রয়োগ করে কাজ করে না, আল্লাহ তাদের ওপর অপবিত্রতা চাপিয়ে দেন” (সুরা ইউনুস: ১০০)। কোরআনে আরও বলা হয়েছে: “এ কথা সত্য যে, এমন অনেক জিন ও মানুষ আছে যাদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। কারণ তাদের হৃদয় ও আত্মা আছে, যা দিয়ে তারা আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তারা শোনে না। তারা পশুর মতো বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। এরাই ওইসব লোক, যারা অজ্ঞতার মধ্যে পড়ে আছে,” (আরাফ : ১৭৯)।

দেওয়ানবাগী পীর স্বয়ং গোমরাহ ছিলেন। ইসলাম সম্পর্কে তার জ্ঞান বা পড়াশোনা হাঁটু অবধি ছিল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তিনি ধর্মীয় শিক্ষক হিসেবে ছিলেন এবং একই সময়ে তিনি ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়ার পীর আবুল ফজল সুলতান আহমেদ চন্দ্রপুরীর জামাতা ছিলেন। তার আসল নাম মাহবুবে খোদা। তাঁর এক ভায়রা ভাই ছিলেন সেনাবাহিনীর পদস্থ অফিসার। আমার সঙ্গে যখন দেওয়ানবাগীর পীরের পরিচয় তখন তার ভায়রা ভাই একজন ব্রিগেডিয়ার। ঢাকায় চন্দ্রপাড়ার পীরের একটি ছোটখাট খানকাহ ছিল, সম্ভবত পরীবাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার ঘনিষ্ট এক সহপাঠিকে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে হঠাৎ ধর্মকর্মে অতি মনোযোগী হয়ে ওঠতে দেখি। ক্লাসে নিয়মিত অনুপস্থিত থাকে। কিছুদিন পর তাকে দাড়ি দীর্ঘ হয়, কপালে সিজদার দাগ দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। সে মৃদুভাষী ছিল। অনেক পীড়াপীড়ির পর বলে চন্দ্রপাড়ার খানহাহ’য় যায় সে। তার কাছেই চন্দ্রপাড়ার পীরের খাদেম মাহবুবে খোদার কথা প্রথম শুনি। আমাকেও সে আমন্ত্রণ জানায়। আমি কখনও যাইনি। কিন্তু সে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল। সাবসিডিয়ারি পরীক্ষা দেয়নি, অতএব অনার্স পরীক্ষা দেয়ার প্রশ্ন আসে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসাও ছেড়ে দিয়েছিল।

সত্তরের দশকের শেষ দিকে চন্দ্রপাড়ার পীর আবুল ফজল সুলতান আহমেদ ইন্তেকাল করেন। পীরালি সিলসিলায় পীরের মৃত্যুর পর তার পুত্রসন্তান থাকলে তিনিই হবেন গদীনসীন পীর। দুর্ভাগ্যক্রমে চন্দ্রপাড়ার পীরের পুত্র সন্তান, যিনি তার বৈধ উত্তরাধিকারি, তার বয়স ছিল কম এবং ব্রিগেডিয়ার দুলাভাইয়ের তত্বাবধানে ঢাকার কোনো স্কুলে ক্লাস এইটের ছাত্র। ওই বছর চন্দ্রপাড়ায় যে ওরশ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে মাহবুবে খোদা তার শ্বশুরের স্থলে নিজেকে পীর বলে দাবী করেন। কিন্তু সুলতান আহমেদ তাকে খেলাফত দিয়ে যাননি এবং তার মুরিদরা তাকে পীর হিসেবে মেনে না নেয়ায় উভয় পক্ষে সংঘর্ষ হয়। মৃত পীরের দরগাহ প্রাঙ্গণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং যুদ্ধে পরাজিত হয়ে মাহবুবে খোদা চন্দ্রপাড়া ত্যাগ করে আরামবাগে তার নিজস্ব খানকাহ স্থাপন করেন। এরপর তার পক্ষে আর কখনও চন্দ্রপাড়া যাওয়া সম্ভব হয়নি।

মাহবুবে খোদা জনসংযোগ ভালো বুঝতেন। শ্বশুরের মৃত্যুতে তার উত্তরাধিকারিত্বের পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি সংবাদপত্রে নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠাতেন। যারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি নিয়ে আসতেন আমি তাদের কাছে আমি আমার সহপাঠির কথা জানতে চাইলে তারা জানায় তিনি চন্দ্রপাড়া দরবারের পক্ষে ছিলেন এবং চন্দ্রপাড়ায় রয়েছেন। তারা মাহবুবে খোদাকে আমার কথা বলে থাকবেন। একদিন তাদেরই একজন আমাকে ফোন করে বলেন, ‘বাবা’ আপনার সাথে কথা বলতে চান। আমি তাদের ‘বাবা’ মাহবুবে খোদার সঙ্গে কথা বলি। তিনি আমাকে তার দরবারে আমন্ত্রণ জানান। আমি হা, বা না বলিনি। দেখি, ওদিক গেলে যাব,এ ধরনের কথা বলে তার সাথে কথা শেষ করি।

আমি যখন বেড়ে ওঠি তখন আমাদেরএলাকায় তেমন কোনো পীরের অস্তিত্ব ছিল না। তবে এলাকায় কিছু লোক এনায়েতপুরের পীরের মুরিদ ছিল বলে শুনেছি। আমি যখন ক্লাস নাইনের ছাত্র তখন আমাদের গ্রামেই অর্ধেকটা মাটির নিচে দেবে থাকা এক প্রাচীন মসজিদ পুন:নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং উদ্যোক্তারা শর্ষিনার পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে নিয়ে আসেন। তখন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। দোকানপাটে, অফিসে ঝুলিয়ে রাখা আইয়ুব খানের ছবি নামানো ও আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছিল। শর্ষিনার পীর সাহেব আইয়ুব খানের সমর্থক ছিলেন। আমাকে কেউ শর্ষিনার পীর বিরোধী লিফলেট গছিয়ে দিয়েছিল, আমি সেগুলো সমাবেশে বিতরণ করেছি। গ্রামের মানুষ অতো সচেতন ছিল না। আমাকে কেউ কিছু বলেনি। সন্ধ্যার পর পীর সাহেবের বক্তৃতাও শুনেছি। যেহেতু বিকেলেই তার বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণ করেছি, অতএব তার কোনো কথাই ভালো লাগেনি। শর্ষিনার পীরই আমার দেখা প্রথম পীর। অনেক পরে আটরশির পীরের নামে আমাদের এলাকার মানুষকে পাগল হতে দেখি। দলে দলে লোক তার দরবারে যেতেন। কারণ, আটরশির পীর হাশমতুল্লাহ’র বাড়ি আমাদের পাশের গ্রাম পাকুরিয়ায়। হামশতউল্লাহ পাকিস্তান সরকারের কৃষি বিভাগে আমার আব্বার সহকর্মী ছিলেন এবং আব্বা তাকে ভালো মানুষ বলতেন। ফরিদপুরের এনায়েতপুরীর দরবারে তিনি নিয়মিত যাতায়াত করতেন এবং এনায়েতপুরীর কন্যাকে বিয়ে করার পর পীরের মৃত্যুতে হাশমতুল্লাহ গদীনশীন হয়ে মোগল সম্রাটদের চেয়েও দীর্ঘ নাম “হযবত কেবলা জান, মহা ইমাম, মহা মুজাদ্দ্দে, আখেরি মুরশিদ, বিশ্ব অলি, খাজাবাবা শাহ সুফি ফরিদপুরী (কু:ছে:আ:) ধারণ করেছিলেন। আল্লাহ ইশারায় তার পিতৃপ্রদত্ত প্রকৃত নাম ‘হাশমতউল্লাহ’ গায়েব হয়ে গিয়েছিল। তিনি আর কখনও তার জন্মস্থান শেরপুরে ফিরে যাননি। সম্ভবত এভাবেই পীরালি গড়ে ওঠে এবং পীরদের দরবার, মাজার ঘিরে এক ধরনের সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আবুল মনসুর আহমদের ‘হুজুর কেবলা’ পাঠ করার কারণেও পীরদের ব্যাপারে আমার মনে বিরূপ ধারণা ছিল এবং আছে।

আমি খুব বেশি সংখ্যক পীরের মাজার বা দরবার দেখিনি। দিল্লিতে নিজামুদ্দীন এলাকায় থাকার সময় নিজামুদ্দীন আউলিয়ার মাজারে গেছি, সেখানে কোনো দরবারী আমেজ নেই। বিকেলে গিয়ে কাওয়ালী শুনতাম সেখানে। কাছে তাবলীগ জামাতের মারকাজ, সেখানে প্রচুর ভিড়। মেহরুলিতে কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকীর মাজারে গেছি। সেটিও আড়ম্বরহীন। বাংলাদেশে শাহজালাল, শাহ পরানের মাজারে বেড়াতে গেছি। আমার কোনো মানত ছিল না। আমি কোনো সুতা বাঁধিনি, দানবাক্সে কোনো অর্থ দেইনি, মাদুলি ক্রয় করিনি, বা তবারক গ্রহণ করিনি। মাজারে কী হয় তা দেখার কৌতুহল নিবারণ করা ছাড়া আর কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। যাদের মাজারেই গেছি, কবরে শুয়ে থাকা পীরদের ভুলত্রুটি থাকলে তা মার্জনা করার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছি।

মাহবুবে খোদার সঙ্গীরা নাছোড়বান্দা হয়ে ওঠেছিলেন তাদের ‘বাবা’র সাথে আমাকে দেখা করানোর জন্য। অবশেষে রাজী হলাম। তবে শর্ত জুড়ে দিলাম, তার সামনে ফ্লোরে বসবো না। বিদায় নেয়ার সময় তাকে সামনে রেখে পিছিয়ে আসতে পারব না। তারা বিব্রত হলেও বেশ কিছুদিন পর রাজী হলেন। আমি আমার সহকর্মী আজম মীরকে সাথে নিয়ে আরামবাগে মাহবুবে খোদার দরবারে যাই। তখনও ‘দেওয়ানবাগী’ বা ‘সুফি সম্রাট’ হয়ে ওঠেননি এবং ‘বাবে রহমত’ও গড়ে ওঠেনি। আমরা পীরের দরবার কক্ষে প্রবেশ করি। ওই সময়ে ঢাকায় জনপ্রিয় স্যানিটারি ফিটিংস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নাজমা মেটাল এর মালিকের বাড়ির দোতলা পীরের দরবার। বাড়ি মালিক পীর ভক্ত মানুষ, কোনো ভাড়া নেন না। কক্ষে বেত দিয়ে তৈরি সিংহাসনতূল্য আসন ছাড়া আর কিছু নেই। আমাদের দু’জনের জন্য দুটি চেয়ার এনে দেয়া হলো। পীর সাহেব আসলেন, আমরা হাত মেলালাম। বেশ হাসিখুশি মানুষ। নানা বিষয়ে কথাবার্তা বললাম আমরা। একসময় চা-নাশতা পরিবেশন করা হলো। তার প্লেট, গ্লাস, চামচ সবই সুদৃশ্য, মূল্যবান। আমাদেরগুলো সাধারণ। এর মধ্যে কিছু তরুণ এলো। এসেই ‘বাবা’র নূরানি চেহারা দেখে বেহুশ হওয়ার উপক্রম করলে দু’একজন তাদেরকে সামলালো। কেউ দ্বিতীয়বার মাথা তোলার সাহস করলো না। তারা মাথা নিচু করে মেঝের ওপর বসে থাকলো এবং ‘বাবা’ তাদের জন্য দোয়া পড়ে দূর থেকে ফুঁ দেয়ার পর তারা হাত জোড় করে পায়ে পায়ে পিছিয়ে বের হয়ে গেল। আমরা আরও কিছু সময় পীরের সান্নিধ্যে কাটিয়ে চলে আসি।

কিন্তু পীর যত বড় হয়ে ওঠতে থাকেন, যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। সব অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে আসেন পীরের খাস ভক্ত চঞ্চল ও পীরের জামাতা সাইদুর। কখনও পীর সাহেবও ফোন করে বিশেষভাবে বলেন। দু’একটা অনুষ্ঠানে গেছি, তাও শুধু খাওয়ার সময়। না গেলে অফিসে খাবার পাঠিয়ে দিতেন। মুরিদ সংখ্যা বেড়ে চলায় পীর সাহেব নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগে একটি জায়গা কিনেন। একবার তার খাদেমরা ধরেন দেওয়ানবাগে ওরশে যেতে। আরও সাংবাদিক যাবেন। প্রেসক্লাব থেকে একটি মাইক্রোবাসে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। যারা গিয়েছিল সবার কথা মনে না থাকলেও যুগান্তরের মরহুম বার্তা সম্পাদক আহমেদ ফারুক হাসানের কথা মনে আছে। পীর সাহেব ইতোমধ্যে দেওয়ানবাগী হয়ে উঠেছেন। আমরা পৌঁছে দেখলাম পীর সাহেব আয়োজন পরিদর্শন করছেন। কেউ কেউ তাকে সামনে দেখে চিৎকার করে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। অন্যেরা তার সাথে দৃষ্টি এড়ানোর জন্য মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। খাওয়ার সময় আমাদেরকে তাঁর দরবার কক্ষে নেয়া হলো। অনেক গন্যমান্য লোক। দেওয়ানবাগীর পীর সিংহাসনে সমাসীন। আমরা কয়েকজন ছাড়া সকলের মাথা ও দৃষ্টি অবনত।

অল্প কিছুদিন পর জানা গেল দেওয়ানবাগে পীরের বড় সড় আস্তানা গড়ে তোলার জন্য আশপাশের জমির মালিকদের চাপ দেয়া হচ্ছে জমি বিক্রয়ের জন্য। তা না হলে জমি দখল করে নেয়ার হুমকিও দেয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ আসতে থাকে। মোজাফফর ন্যাপের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছিল সেখানে। তারাও পীরের বিরুদ্ধে জমি জবরদখলের অভিযোগ আনে। এভাবে অনেকদিন চলে। শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল জানি না। দেওয়ানবাগের পীরের সাথে আমার শেষ সাক্ষাৎ হযেছিল তিনি ১০ অথবা ১২ কোটি টাকায় আরামবাগে এখন যেটি ‘বাবে রহমত’ সেটি কেনার পর। এবার তার সাথে সাক্ষাতের সময় তার জামাতা সাইদুর সাথে ছিল। আমার সাথে সাধারণ আলোচনা, হাসি-রসিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

ইসলাম সম্পর্কে অর্ধ-শিক্ষিত একজন লোক মনগড়া আজগুবি কথা বলছে এবং মানুষ দলে দলে তার অনুসারীতে পরিণত হচ্ছে, দেশটা কোথায়, কোন্ খাদে নেমে গেলে এটা সম্ভব হতে পারে। বিজ্ঞানের অবদান মানুষের হাতে হাতে, তখনও কিছু মানুষ বিশ্বাস করে দেওয়ানবাগীর পীরের দরবার থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘আত্মার বাণী’ পানিতে চুবিয়ে সেই পানি পান করলে গর্ভবতী নারীর যন্ত্রণামুক্ত প্রসব হয়, বন্ধ্যা নারী সন্তান ধারণের মত উর্বর হয়ে ওঠে, ক্যান্সারের মত দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে নিস্কৃতি লাভ করা যায়। শুধু তাই নয়, দেওয়ানবাগীর পীর যখন তখন নবী মুহাম্মদকে স্বপ্নে দেখতেন এবং তাকে কি কি বলেছেন তার খাস ভক্তরা তা প্রচার করতো। মানুষ সবসময় সংশয়ের মধ্যে থাকে। কিন্তু পীরদের কথা তারা বিনা সংশয়ে বিশ্বাস করে কেন?

Published in ধর্ম

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *