আমরা পান করছিলাম এবং সেখানে ছিল পানপাত্র, সোরাহি, সুরাপূর্ণ কলসি এবং অন্যান্য পাত্র। পানীয় পরিবেশনকারিনী সাকি অসহায় হয়ে পড়েছে। সাকি সকলকে অসহায় করে ফেলেছে, কিন্তু সাকিকে একজন সুরাসক্ত একটু বেশিই দুর্বল করেছে। লোকজন সবসময় বলে যে সুরা মানুষকে উন্মত্ত ও বিকল করে দেয় দশ পাত্র পান করার পর না হলে বারো পাত্র, এমনকি তুমি যদি পুরো সোরাহি শেষ করে ফেল তবুও তুমি উন্মত্ত হবে না।
সুরা বিক্রেতা বলে, “পানশালা যদি সুরা শূন্য হয়ে যায়, নগরীতে আরও পানশালা আছে।” ঠিক এ কথাটিই আমি বলছি। কে পারে পুরো সুরা পূর্ণ বড় একটি সোরাহি নিঃশেষ করে ফেলতে? একশ জনের পক্ষেও তা পান করে শেষ করা সম্ভব নয়।
কিন্তু যে ব্যক্তি অতিরিক্ত সুরা পানে মাতাল হয়ে পড়ে পৃথিবীতে কখনো এমন কোনো ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয় না। যে ব্যক্তি মাত্রার অধিক পান করে, সে তত বেশি শান্ত, নিঃস্বার্থ হয়ে ওঠে; যত বেশি উন্মত্ত হয় সে তত বেশি নি:স্বার্থ হয়। সে আকণ্ঠ পান করেছে, তবুও নিঃস্বার্থ, গম্ভীর এবং সে সমগ্র পৃথিবীতে এবং সমগ্র বিশ্বমণ্ডলে প্রশান্তির গাম্ভীর্য ছড়িয়ে দেয়।
সেই পৃথিবী অদ্ভুত এক পৃথিবী। কিন্তু এমন অদ্ভুত কেন? তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না যে, এই লোকটি ঐশ্বরিক সুরার মাঝে নিমগ্ন। সুরার প্রভাব তাকে পুরোপুরি ভাবাচ্ছন্ন করেছে। তার অস্তিত্বই রূপান্তরিত হয়েছে সুরা হিসেবে। সে আসে এবং পানপাত্র ছুড়ে ফেলে। তুমি কি দেখছ না সে সুরা ফেলে দিয়েছে এবং নিজেও পড়ে গেছে? এ ধরনের পতন হাজারবার উঠে দাঁড়ানোর চেয়ে উত্তম।
তারা মাথা নাড়ে, “হ্যাঁ, হ্যাাঁ।” অধিক সংখ্যক ‘হ্যাঁ’ এর ওপর আরও জোর দিতে আমিও মাথা নাড়ি।
এক লোক বলে যে, সুরা পান করে সে তাল হারিয়ে ফেলেছে। সুরার প্রভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে তার অবস্থা এবং স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারছে না। আবোল-তাবোল কথা বলছে, যা তাদের বোধগম্য হচ্ছে না। তা হলে বুঝতে হবে তার মাথার অবস্থা বিপজ্জনক নয়।
কিন্তু এই লোকটি সুরার প্রভাবে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেনি। এতটা সুরা পান করে স্বাভাবিক থাকার সামর্থ্য তার নেই; আসলে সে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে সুরার অন্তর্নিহিত আলো এবং সুরার গন্ধে। তার মাথা মনসুর হাল্লাজের (আবু মুগিথ আল-হুসাইন বিন মনসুর, যিনি মনসুর হাল্লাজ নামে খ্যাত। ইরানি সুফি কবি ও সুফিবাদের ওস্তাদ, যিনি ‘আনা’ল-হক্ক’ বা ‘আমিই সত্য’ ঘোষণার জন্য বিতর্কিত। জীবনকাল : ৮৫৮-৯২২) মতো বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে আছেন।
যে ব্যক্তি সুরা পানে আসক্ত, তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয় না। তার সম্পর্কে কেউ কথা বলে না। সে অচেনা আগন্তুক। সে পৃথিবীতে আসে, চারদিকে দেখে এবং চলে যায়। কিন্তু তার মতো আরও লক্ষ মানুষ আছে।”
Comments