Skip to content →

মধ্যকাশে বায়ু ত্যাগ নিয়ে কলহ এবং ভিয়েনায় বিমানের জরুরী অবতরণ.

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

বহু কারণেই বিমান জরুরী অবতরণ করে। কিন্তু উড়ন্ত বিমানে বয়োবৃদ্ধ এক যাত্রীর দুর্গন্ধযুক্ত সশব্দ বায়ু ত্যাগের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিমানের জরুরী অবতরণের ঘটনা সম্ভবত বিশ্বে প্রথমবার ঘটল। ঘটনাটি আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনাম হয়েছে বলেই আমরা তা জানতে পেরেছি। গত সপ্তাহে দুবাই থেকে আমষ্টারডামগামী ট্রান্সএভিয়া এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এক ওলন্দাজ যাত্রী মধ্য আকাশে বায়ু ত্যাগ শুরু করলে আরেক ওলন্দাজ সহযাত্রী তাকে বারবার অনুরোধ জানান বায়ু ত্যাগ বন্ধ করতে, কিন্তু তিনি তা বন্ধ করেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে। ক্রমে তা অন্যান্য যাত্রীর মধ্যে ছড়িযে পড়ে। কেবিন ক্রু এসেও কলহ থামাতে ব্যর্থ হয়। বিমানের ক্যাপ্টেন হুশিয়ারি দেন, তাতেও কলহ না থামলে ক্যাপ্টেন বাধ্য হন গতিপথ পাল্টে ভিয়েনা ইন্টরন্যাশনাল এয়ারপোর্টে বিমানের জরুরী অবতরণ ঘটাতে। সেখানে বিমানে কুকুরসহ আরোহণ করে অষ্ট্রীয় পুলিশ এবং কলহরত দুই ওলন্দাজ এবং একই আসন সারিতে বসা ওলন্দাজ-মরোক্কান বংশোদ্ভুত দুই বোনকে বিমান থেকে নামিয়ে নিয়ে যায়। দৃশ্যত: ঘটনার সঙ্গে দুই বোনের কোন সম্পর্ক না থাকলেও বিমান কর্তৃপক্ষের এক মুখপাত্র জানান যে, তারাও বচসায় অংশ নিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেছে। পুলিশের এক মুখপাত্র লন্ডনের দ্য মিররকে জানান যে, এক যাত্রীর পেটে বায়ু জমে ছিল এবং তিনি বায়ু নির্গমণ থামানোর কোন চেষ্টা করেননি, তা নিয়েই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছিল। চার যাত্রীকেই ট্রান্সএভিয়ার ফ্লাইটে নিষিদ্ধ করা হয় এবং তাদেরকে বিকল্প ব্যবস্থায় ভিয়েনা থেকে আমষ্টারডাম যেতে হয়। তবে মেয়ে দুটি এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার হুমকি দিয়েছে, কারণ তারা ঘটনার সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত না হওয়া সত্বেও তাদেরকে বিমান থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। বায়ু ত্যাগের মতো তুচ্ছ একটি কাজে এমন কান্ড ঘটানো বাড়াবাড়িই হয়েছে বলে আমার মনে হয়। আশা করি অনেকে আমার সাথে একমত হবেন।

মানুষসহ জীব মাত্রই বায়ু ত্যাগ অনিবার্য একটি বিষয়। হ্যালি ব্যারি থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের রানি পর্যন্ত সবাই এই কর্মটি করেন। জানা যায়, ইংরেজি ভাষার প্রাচীনতম শব্দগুলির একটি হচ্ছে “ভধৎঃ” বাংলায় সাধারণভাবে যার অর্থ ‘পাদ’। তবুও মানুষের সমাজে বায়ু ত্যাগের ঘটনায় কোথায়ও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, কোথায়ও বা স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করা হয়। যেখানে এ কার্মে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, বা ট্যাবু বিবেচনা করা হয়, সেখানে চেপেচুপে রাখলেই হলো, অথবা অনিবার্য হলে একটু একটু এদিক ওদিক গিয়ে কর্মটি সেরে আসলেই হলো, ঠিক যেভাবে আমরা মলমূত্র ত্যাগ করতে সমাগমস্থল থেকে কিছু সময়ের জন্য কেটে পড়ি। কেন আমরা বায়ু ত্যাগ করি? নির্গত বায়ু দুর্গন্ধযুক্ত হয় কেন? চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসবের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। তবে যেটুকু বলা আবশ্যক তা হলো; বিভিন্ন কারণে অন্ত্রে যে বায়ু জমে তা নির্গত হওয়াই বায়ু ত্যাগ। নির্গত বায়ুতে সালফার উপস্থিতিই দুর্গন্ধ ছড়ানোর কারণ। তবে দুর্গন্ধ খুব বেশি ক্ষেত্রে হয় না, মাত্র এক শতাংশে। উদরে সৃষ্ট বায়ুতে সাধারণত ৫০% নাইট্রোজেন, ২১% হাইড্রোজেন, ৯% কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং ৪% অক্সিজেন থাকে। আর শব্দ উত্থিত হয় পায়ুপথের কম্পনের কারণে।

বায়ুর পেছনে কতোটা চাপ থাকে এবং পেশির দৃঢ়তা কতোটুকু তার ওপর নির্ভর করে শব্দের মাত্রা। যেসব খাদ্য সালফার সমৃদ্ধ, যেমন: সিম, বাঁধাকপি, পনির, সোডা, ডিম ইত্যাদি ভোজনে বায়ু দুর্গন্ধযুক্ত হয়। একজন মানুষ দিনে অন্তত ১৪ বার বায়ু ত্যাগ করে, যার পরিমাণ প্রায় আধা লিটার থেকে ৭শ’ মিলিলিটার, যা জন্মদিনে একটি বেলুন ফোলানো জন্য যথেষ্ট। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ যদি ৬ বছর ৯ মাস অব্যাহতভাবে বায়ু ত্যাগ করে, তাহলে তা একটি আণবিক বোমার শক্তির সমতূল্য গ্যাস উৎপাদন করে। পুরুষ ও মহিলারা যদি একই খাদ্য গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে মহিলা মহিলারা পুরুষের চেয়ে অধিক বায়ু ত্যাগ কওে এবং মহিলাদের নির্গত বায়ুতে দুর্গন্ধ অধিক। বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, বায়ু উদরে আটকে রাখতে পারলে স্বাস্থ্যগত ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কিন্তু অনেকে মনে করেন, উদরস্থ বায়ু চেপে রাখলে ‘হার্মোহয়েডস’ বা অন্ত্রের ওপর অহেতুক চাপ সৃষ্টি করে। অনেক সংস্কৃতিতে প্রকাশ্যে বায়ু ত্যাগ শালীনতার পরিপন্থী, কিন্তু অনেক সংস্কৃতিতে এর বালাই নেই। দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গলে‘ইয়ানোমামি’ নামে একটি উপজাতি প্রকাশ্যে বায়ু ত্যাগকে শুভেচ্ছা হিসেবে গ্রহণ করে এবং চীনের কোনো কোনো স্থানে বায়ুর গন্ধ গ্রহণকারীর চাকুরি পাওয়ার সম্ভাবনাও আছে। প্রাচীন রোমে স¤্রাট ক্লদিয়াস বায়ু চেপে রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ভেবে একটি আইন করেছিলেন, যাতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ভোজ অনুষ্ঠানে সশব্দে বায়ু ত্যাগ গ্রহণযোগ্য।


উদরস্থ বায়ুতে যদি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা উৎপন্ন মিথেন ও হাইড্রোজেন থাকে, তাহলে তা উচ্চ দাহ্য। সেজন্য অনেক সংস্কৃতিতে প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে আগ্রহী ব্যক্তির পশ্চাদদেশে জ্বলন্ত কাঠি ধরে রাখা হয় এবং বায়ু ত্যাগের সাথে তা বিস্ফোরণের মত জ্বলে উঠে। অবশ্যই এ প্রতিযোগিতা বিপজ্জনক। প্রাচীন জাপানে একারণে বায়ু চেপে রেখে ‘বায়ু ত্যাগ প্রতিযোগিতা’র আয়োজন করা হতো যে, শেষ পর্যন্ত কে সবচেয়ে উচ্চ শব্দে এবং দীর্ঘক্ষণ ধরে বায়ু ত্যাগ করতে পারে।উনবিংশ শতাব্দেীতে ফ্রান্সের এক বিখ্যাত পেশাদার বায়ু ত্যাগকারী ছিলেন, যার নাম মি: জোসেফ পুজোল, যাকে লে পেটোমে (বায়ু ত্যাগকারী) বলা হতো। তিনি মন্ট্রিল, মেলবোর্ন ও এডিনবার্গসহ বিশ্বের সেরা অনেক কমেডি অনুষ্ঠানে ‘ফার্ট আর্টিষ্ট্রি’ প্রদর্শন করে খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন। লোকটির ট্রাউজারের পেছন দিকে ফুটো করে দেয়া হতো এবং তার শক্তিশালী বায় তিনি ফুট দূরে রক্ষিত মোমবাতি নিভিয়ে ফেলত। গ্রীক চিকিৎসক হিপোক্রেটাস বলেছেন, ‘বায়ু ত্যাগ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। উদর থেকে নির্গত বায়ুর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১০ ফুট অর্থ্যাৎ ঘন্টায় পায় ৭ মাইল।


আধুনিক যুগে যদিও প্রকাশ্যে বায়ু ত্যাগের বিষয় আলোচনা করা বা এ নিয়ে লেখালেখি অনেকটা পর্নোগ্রাফির মতো বিবেচনা করেন, কিন্তু অনেক বিশ্ব বরেন্য সাহিত্যিকদের মধ্যে উইলিয়াম শেক্সপিয়র তার নাটকে ৫ বার বায়ু ত্যাগের প্রসঙ্গ এনেছেন। জনাথন সুইফট ১৭২২ সালে ‘বেনিফিট অফ ফার্টিং এক্সপ্লেইনড’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ রচনা করে গেছেন। জেওফ্রে চসার তার ‘কেন্টারবেরি টেলস’ এ এক ব্যক্তি সম্পর্কে একটি লাইন লিখেছেন, যিনি “ষবঃ ভষু ধ ভধৎঃ ধং ষড়ঁফ ধং রঃ যধফ নববহ ধ ঃযঁহফবৎ-পষধঢ়” (যে বজ্রের আওয়াজের মতো জোরে বায়ু ত্যাগ করত)। দান্তে তার ‘ইনফার্নো’ তে এক দানবের উল্লেখ করেছেন, যার পশ্চদদেশ থেকে ভেরীর আওয়াজ উঠত। আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা পিতা বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের পুরো একটি নিবন্ধ আছে “ফার্ট প্রাউডলি’ নামে।


বায়ুত্যাগ সম্পর্কে লেখার সুযোগ পেয়ে আমি আমার ‘লিটারারি মেন্টর’ খুশবন্ত সিং এর উপন্যাস ‘দিল্লি’র একটি অধ্যায়ের স্বাদ গ্রহণ থেকে পাঠকদের বঞ্চিত রাখতে পারছি না। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রাচ্য দেশীয় সুফি কবি শেখ সা’দীর কবিতার উদ্ধতি দিয়েছেন,


“হে পরম জ্ঞানী! উদর হচ্ছে বায়ুর কারাগার
জ্ঞানীরা এই বায়ুকে বন্দী করেন না,
বায়ু যদি তোমার উদরে মোচড় দেয়
মুক্ত করে দাও, বায়ু ত্যাগ করো,
কারণ উদরে বায়ু জমলে, তা
হৃদপিন্ডের ওপর পাথরের মত মনে হয়।
“হে শিরাজ নগরীর মহাজ্ঞানী, বায়ু সত্যি সত্যি আমার হৃদপিন্ডের ওপর পাথর চাপার মত যন্ত্রণা দিচ্ছে। কিভাবে আমি বায়ু ত্যাগ করবো। বায়ু ত্যাগ জীবনের তিন পরমানন্দের একটি। প্রথম: যৌনক্রিয়া, দ্বিতীয়: খুসকিপূর্ণ মাথায় তেল মালিশ করা: তৃতীয়: একটি দীর্ঘ আরামদায়ক বায়ুত্যাগ। আমার মধ্য বয়স থেকে আমি এই ক্রমে উল্টোভাবে সজ্জিত করেছি। জীবনের আনন্দে বায়ুত্যাগ করাকে তালিকার শীর্ষে স্থান দিয়েছি। আবদ্ধ বায়ুর কারাগার হচ্ছে, ঢাক, যা আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে ‘উত্তম পাদম’ হিসেবে পরিচিত ছিল। এর আওয়াজকে বলা হয় ‘ফাদাকাম’। বায়ুত্যাগ ইচ্ছার ব্যাপার। এটি ঘোষণাকারী শব্দ এবং পুরুষোচিত। শব্দ বেশি হলে দুর্গন্ধ থাকে। উচ্চতম শব্দে দুর্গন্ধ কমে যায়। —– দ্বিতীয় পর্যায়ের বায়ু ত্যাগের শব্দ সানাই এর শব্দের মত। আমাদের পুূর্ব পুরুষরা এর নামকরণ করেছেন ‘মধ্যমা,’ এবং এবং শব্দ নির্গত হয় ‘থাই, ‘থাই’ সুরে, বায়ু চালিত এই সূর যন্ত্রকে বিখ্যাত করেছেন বারাণসীর উস্তাদ মিসমিল্লাহ খাঁ। শারীরিক অবস্থানে একটু পরিবর্তন করেই এ ধরণের সুর উৎপাদন করা সম্ভব অথবা উদরে মৃদু চাপ দিলের এমন সূর বের হবে।

নমনীয় শব্দ তরঙ্গের কারণে ঢাকের শব্দের চাইতে ভিন্ন ও প্রলম্বিত। তৃতীয় ধরনের বায়ু নির্গমণের শব্দ কাঁচা চামড়া অথবা খসখসে পুরনো পার্চমেন্ট কাগজ ঘসার মত। এক দফায় শব্দ হয় না, বরং ধারাবাহিকতা থাকে —- “ফুরুৎ-ফুরুৎ-ফুরুৎ! সব্জী জাতীয় খাদ্য বেশি খেলে এ ধরনের শব্দ সহযোগে বায়ু নির্গত হয়। বয়সের ভারে বায়ুপথের পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ারও লক্ষ্মণও এটি। চতুর্থ তাল হচ্ছে তবলার। ঢাকে আঘাত করলে উত্থিত আওয়াজের মত। তবলার শব্দ তার প্রভুর সম্মতি ছাড়াই উত্থিত হয়। ফলে তাকে দারুণ বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। বিশেষ করে কোন সমাবেশে এমনটি হলে। পঞ্চম ধরণের বায়ু নির্গমণ শব্দহীন দুর্গন্ধযুক্ত বোমার বিস্ফোরণের মত। যেহেতু এর কোন শব্দ নেই, সেজন্য পাশের কোন ব্যক্তির উপর আরোপ করা যায় ‘গুপ্ত দান’ হিসেবে। ‘দাতা’কে সহজে সনাক্ত করা যায় তার ‘আমি নই’ মুখভঙ্গি দেখেই। সে নাকট একদিকে সরিয়ে নেবে কাউকে দোষারূপ করার দৃষ্টিতে। সে নিশ্চয়ই জাপানি প্রবাদের প্রতি মনোযোগী, “যে কথা বলেছে, সেই বায়ু ত্যাগ করেছে।” কেউ যদি দুর্গন্ধযুক্ত ‘গুপ্ত দান’ করেই ফেলে তাহল্যে অন্যেরা এই দাতাকে খুঁজে বের করুক। বায়ু ত্যাগ সম্পর্কে বিভিন্ন জাতির মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। ইউরোপীয় ও আমেরিকানরা এ ব্যাপারে পুরোপুরিই নির্লজ্জ। এটি তাদের গ্রীক উত্তারিধারের কারণেই হয়েছে। নিয়ারকস (প্রথম শতাব্দী) পেটে বায়ু উৎপন্ন হলে যে কোন সময়ে তা ত্যাগ করার গুণাবলী বর্ণনা করে গেছেন:
“বায়ু আটকে গেলে একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে.


নির্গত হতে দিলে বায়ু সঙ্গীতে সূর তুলবে।
বায়ু স্বাস্থ্য প্রদায়ী সঙ্গীত, বায়ু মারতেও পারে
জীবন রক্ষাও করতে পারে।
উদরস্থ বায়ু পরাক্রমশালী এক স¤্রাটের মত।”
নিয়ারকস শব্দহীন দুর্গন্ধ বোমা এবং শ্রবণযোগ্য প্রকরণের বায়ুর ভিন্নতা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তিনি বলেছেন:
“হেনরি কী দীর্ঘশ্বাস ফেলে, না বায়ু ত্যাগ করে?
দু’দিকেই তার নি:শ্বাস খুব ভারি।”
সমসাময়িক ইংরেজি সাহিত্যেও বায়ু ত্যাগ সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে:
“জ্ঞানী ব্যক্তিদের থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন
আমাকে বলো, তোমরা কেন কায়ুত্যাগ করো না?
কখনো না? প্রিয় মিস ব্রাইট’
আমার বায়ুত্যাগের প্রয়োজন হয় না, আমি লিখি।”
“বায়ুত্যাগের ক্ষেত্রে শ্বেতাঙ্গরা যদি এতো অভদ্র হয়, তাহলে ভারতীয়রা কম কিসে। ——- যেহেতু তারা অতি
মশলাযুক্ত খাবার খায়, সেজন্য বায়ু ত্যাগেও তারা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং এ নিয়ে তারা হাসাহাসি করে। একবার
এক কেবিনেট মন্ত্রীর বক্তব্য অল ইন্ডিয়া রেডিও বহি:সম্প্রচার বিভাগের জন্য ধারণ করার সময় তিনি সশব্দে বায়ু ত্যাগ করে ফেলেন। ফলে বক্তব্যটি সম্পাদন করতে হয়। কিন্তু প্রচারের সময় ভুলবশত: মূল রেকর্ডটিই চালানো হয়েছিল। ফলে একজন ভারতীয় তার বায়ু ত্যাগের শব্দ শোনানোর বিরল বৈশিষ্ট অর্জন করে। বিষয়টি গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের নোট করা উচিত।


“বায়ু ত্যাগ সম্পর্কে অনমনীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ইরানি ও আরবেদের প্রতি অবশ্যই হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত। এক তরুণ ইরানি সম্পর্কে একটি কাহিনি প্রচলিত আছে যে, তিনি ভরা মাহফিলে বায়ু ত্যাগ করে ফেলেন। তার মনে এতো অনুশোচনা জাগে যে, তিনি শহর ত্যাগ করে চলে যান। অনেক বছর আত্মনির্বাসিত থাকার পর এই আশায় শহরে ফিরে আসেন যে, তার এই ক্ষুদ্র অভদ্রতার ঘটনা লোকজন ভুলে গেছে। নিজের নাম বলে তিনি কয়েকটি ছেলেকে তার পুরনো বাড়িটি দেখিয়ে দিতে অনুরোধ করে। ছেলেগুলো জানতে চায়, ‘তার মানে, অমুক বায়ু ত্যাগকারীর বাড়ি?’ হতভাগ্য তরুণ আবার নির্বাসনে চলে যান। বায়ুত্যাগের জন্য যদি কাউকে পুরস্কৃত করতে হয়, তাহলে অবশ্যই তা দিতে হবে বলখের সুফি আবদুল রহমান হাতাম ইবনে উনওয়ান আল-আসসামকে। বায়ুত্যাগ সম্পর্কে তার মহান দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তিনি ‘বধির হাতাম’ নামে প্রতিসিদ্ধ লাভ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে, একবার তিনি এক মহিলাকে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিষয় ব্যাখ্যা করার সময় মহিলার বায়ু নির্গত হয়ে যায়। সুফি দরবেশ কন্ঠ উঁচু করে বলেন, “জোরে বলুন, আমি কানে কম শুনতে পাই।” মহিলা আরো পনের বছর জীবিত ছিলেন এবং হাতাম কানে কম শোনার ভান করেছেন এবং ভুক্তভোগী লোকজন তার কানের কাছে চিৎকার করেছে। ‘বধির হাতাম’ বিব্রত বায়ুত্যাগকারীদের পৃষ্ঠপোষক সূফি।”

আমার এক ফেসবুক বন্ধু চট্টগ্রামের তওফীকুল আলম পড়াশোনার ব্যাপ্তি আমাকে আকৃষ্ট করে। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ পোষ্ট দেন ফেসবুক ওয়ালে। আমি সেগুলো উপভোগ করি, উপকৃত হই এবং অন্যকেও পাঠ করতে উদ্বুদ্ধ করি। বায়ু ত্যাগ সম্পর্কে ২০১৬ সালে তার পোষ্ট এর কিছু অংশ উদ্ধৃত করছি। তিনি লিখেছেন: “ÑÑÑ আমাদের মধ্যে শিশুরাই নির্মল আনন্দে এটা নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করে। কিন্তু কখনো আমি কোন সুন্দরীকে এটা নিয়ে স্পষ্ট কিছু লিখতে বা বলতে শুনি নাই। ব্যতিক্রম দেখলাম, সুন্দরী নার্গিস ফখরী। গতকাল দেখলাম সে একটা বিলাসবহুল জাকুজি বাথটাবে স্নানরত অবস্থায় থেকে একটা ছবি টুইট করেছে। স্টাটাসে লিখেছে, অসাধারন ফিলিংস ! ——— আমি ছোট থাকতে মনে করতাম, পরী আর সুন্দরীরা কখনো পাদাপাদি করেই না। এটা আমাদের গরীবদের একটা একচেটিয়া ছোটলোকি ব্যাপার। কিন্তু বড়বেলায় জানলাম, বিজ্ঞানীরা বলেন, ফ্রিকোয়েন্টলি পাদা একটা স্বাস্থ্যকর ব্যাপার। উন্নত বিশ্বে কেউ জনসমক্ষে এটা দিয়ে ফেললে এক্সকিউজ মি বলে ক্ষমা চান। কিন্তু এই খেলা এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপে কেউ খেলে না।এখানে লুকিয়ে আলগোছে ছেড়ে দেয়া হয়। আর এক গ্রাম লোক এ ওকে সন্দেহের দৃস্টিতে দেখে।আর দাতা দূর থেকে নির্মল আনন্দ উপভোগ করে।


একবার অস্ট্রেলিয়ায় এক মহিলার ওপেন হার্ট সার্জারি হবে। কিন্তু সে মহিলা ছিলো তীব্র সুচিবায়ুগ্রস্থ।সে তার সার্জনদের অপারেশনের পুর্বে জিজ্ঞেস করে ,আমার এই অস্ত্রপ্রচার কতোটা সময় লাগতে পারে? ডাক্তাররা জানালো, ৪ থেকে ৫ ঘন্টা।
মহিলাঃ আমাকে যে ছুরি-চাক্কু দিয়ে অপারেশন করবেন সেগুলো নিশ্চয় স্টেরিলাইজ করা?
ডাক্তারঃ অবশ্যই । মুসলমানি করার স্কালপেল যেখানে স্টেরিলাইজ করা সেখানে ওপেন হার্ট এর অস্রপাতি কিভাবে না করা থাকবে।উন্নত দেশ বিধায় এ জাতীয় প্রশ্ন সহ্য করা হলো। বাংলাদেশ হলে আপনাকে এখনি কানে ধরে বের করে দেয়া হতো।


মহিলাঃ কিন্তু আসল প্রশ্ন এখনো আপনাকে আমি করি নাই।ছুরি-চাক্কু স্টেরিলাইজ এটা আমি মেনে নিলাম যে,সেগুলো সম্পুর্ন জীবানুমুক্ত। কিন্তু আপনারা পাঁচ পাঁচটা লোক এই পাঁচ ঘন্টা যে না পেদে থাকবেন তার গ্যারান্টি কি? (ডাক্তাররা স্তম্বিত,আক্রমন এদিক দিয়ে আসবে স্বপ্নেও ভাবেন নি) আপনারাই তো পাদাপাদি করে সেই জীবানুমুক্ত ছুরি-চাক্কু পুরোপুরি ইনফেকশাস করে আমাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন।
আর সার্জনদের এটা সহ্য হলো না। উনারা তাকে দ্রুত অবচেতন করলেন, কারন আর ১০ মিনিট এই মহিলা কথা বললে উনারা তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলবার উপক্রম করতে পারেন। পরে কিন্তু সার্জনরা চিন্তা করলেন ,আসলে কি পাদাপাদির ফলে জীবানু নির্গত হয়ে স্টেরিলাইজ করা ছুরি চাক্কু সংক্রামিত করতে পারে? গবেষনা করা হলো, তাতে দেখা গেলো পাদে নির্দোষ মিথেন গ্যাস নির্গত হয়। আর ততোধিক নির্দোষ দইয়ের ল্যাক্টিভ ব্যাকটেরিয়া বাতাসে বের হয়। এটা মোটেই ক্ষতিকর নয়। কেবল ওই মিথেন গ্যাসের সংস্পর্শে কেউ ম্যাচ আর গ্যাসলাইট না জ্বালালেই হলো।


আরেকটি নির্দোষ কৌতুক বলে শেষ করছি, একবার আফ্রিকান এক প্রেসিডেন্ট ইংল্যান্ডে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলো।তো রানী এলিজাভেথ যাদের বেশী সন্মান দেন , তাদের বিশাল শায়ার ঘোড়ার জুড়ী গাড়ীতে ঐতিহ্য মোতাবেক তিনি নিজে অতিথীকে নিয়ে বাকিং হাম প্যালেসে প্রবেশ করেন। অতিথী নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর একটা শায়ার ঘোড়া সশব্দে পেদে দেয়।রানীর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়।তিনি ক্ষমা চেয়ে এক্সকিউজ মি বলেন। আর আফ্রিকান প্রেসিডেন্টও অভব্য নন।তিনিও অক্সফোর্ডে উচ্চশিক্ষিত।তিনি সহাস্যে জানালেন, এতে ক্ষমা চাওয়ার কিছুই নেই হার রয়াল হাইনেস। আমিও প্রায়ই দিই। মানুষ মাত্রেই এটা দেয়, এঞ্জেলরা বাদে।”

Published in Uncategorized

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *