Skip to content →

বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা: খন্ডিত বিদ্যার করুণ পরিণতি

আমি ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস লিখি না। আমার লিখার আরো ক্ষেত্র আছে। কিন্তু এটা লিখতেই হলো। যাকে নিয়ে লিখা তার সীমাবদ্ধতা ফেসবুক পর্যন্ত। বানরের হাতে ছুরি পড়লে যা হতে পারে ফেসবুক পেয়ে লোকটি তদ্রƒপ আচরণ শুরু করেছে।


সৈয়দ কামরুল। এক হীনবীর্য, অসদ্ববংশজাত সারমেয় নন্দন, জীবনে কোনোভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে ব্যর্থ পরশ্রীকাতর, আত্মপ্রবঞ্চক, কবিত্বের দাবীতে আত্ম অহঙ্কারে মাটিতে তার পা পড়ে না। অন্য কেউ তাকে কবি স্বীকৃতি দিক না দিক সামাজিক মাধ্যমে নিজের কবিত্ব জাহির এবং কে তাকে ‘কবি’ খ্যাতি দিল না তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করার মধ্যে পরিতৃপ্তি লাভের চেষ্টা প্রত্যক্ষ করছি আমার কন্যা তূল্য (যাকে শুরু থেকে ‘মা’ ছাড়া কখনো সম্বোধন করি না), আমার ৩৭ বছরের পুরনো এক বন্ধুর মেয়ে বাংলাদেশের উঠতি গল্পকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভিত্তিক একটি গল্প লিখার কারণে তার সম্পর্কে এই কবিপুঙ্গবের আপত্তিকর মন্তব্যের পর থেকে। সেই মন্তব্যে আমাকে নিয়েও তার কটু কথা ছিল। মানসিক বিকারগ্রস্ত লোকটির এই মেয়েটি সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করার আগে ফেসবুকেই দেখে নেয়া উচিত ছিল, যে মেয়েটিকে কবি মাহবুব হাসানও তার মেয়ের মতো বিবেচনা করেন এবং মেয়েটি এবং তার পিতা ফরিদপুরের একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক মিলন ইমামও ড: মাহবুবের পরিচিত। কবিরতেœর বক্তব্যের নির্গলিতার্থ ছিল যে, আমার সাথে যার খাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে তার গল্প লিখার কি অধিকার আছে! আমার পদতলে বসবাসকারী এই মহান কবির নামটিও আমি জানতে পারি আমার সেই ‘মা’ এর কাছে। এর আগে ব্যক্তিটির সঙ্গে তিন দফা সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎ ঘটলেও আমি তার নামও জানতে চাইনি।

পেশাগত কারণেই সমাজ ও ক্ষমতার শীর্ষ থেকে নিচ পর্যন্ত আমার গমনাগমণ ছিল, সাধারণত উপরের দিকের নামগুলোরই প্রয়োজন পড়ে ও মনে থাকে। তবে শৈশব থেকে আমি গ্রীক ভাস্কর্যের প্রতি বিমুগ্ধ ভক্ত বলে অপ্রিয় দর্শন কারো প্রতি আমি বীতশ্রদ্ধ। আমার পুত্র অতি মেধাবী, আমি বলতাম ‘গিফটেড সান’, কিন্তু কোনো কারণে হট হেডেড, বদরাগী। অল্পতেই তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলে। অবাধ ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশে ব্যাধিগ্রস্তের ইচ্ছার বাইরে চিকিৎসা হয়না বলে ওর চিকিৎসা করাতে পারিনি। সামান্য কিছুতেই ৯১১ কল করা ওর অভ্যাসে পরিণত হযেছিল। আমার অনুপস্থিতিতে সে পুলিশ ডেকে ওই আজন্ম কবির বাড়িতে তল্লাশি করিয়েছে তার অনলাইনে অর্ডার দেয়া সামগ্রী। এর আগেও ওই বাড়িতে তার অর্ডার দেয়া জিনিস পাওয়া গেছে। সেদিন ছিল বুধবার, আমার টানা ১৬ ঘন্টা ডিউটি। আমি বাড়ি ছিলাম না। অঘটনটা ঘটে গেছে। এক পর্যায়ে ওর ব্যাধির প্রকোপ শেষপর্যন্ত ওর মাকে বাধ্য করে পুলিশ ডেকে হাসপাতালে পাঠাতে।

আমার পাদপদ্মের মাত্র কয়েক ফুট নিচে কদাচিৎ রাত্রিযাপনকারী কাব্যধরের সাথে আমার দেখা সাক্ষাৎ না ঘটলেও আমার দু’একজন বন্ধু জানতে চান যে, ওই লোকটির সাথে আমার কি হয়েছে। আমি উত্তর দেই, আমার কিছুই হয়নি। তবে আমার ছেলে এমন একটি কান্ড করেছে। আমার বন্ধুর মতে, লোকটি নাকি সংশয়, আমি আসলেই সাংবাদিক কিনা। আমি নাকি সাহিত্য অনুবাদ করার দাবী করি (দাবী করা দূরে থাক, আমি পারত পক্ষে কাউকে বলিও না। তবে এক্ষেত্রে আমার স্ত্রী বলে থাকবে)। এতেও তার সংশয়, কারণ আমার বন্ধুর কাছে তার বক্তব্য, “আমরাও তো বইটই পড়ি, কখনো শুনিনি তো।” এরওর বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো এই খন্ডিত বিদ্বানের পাঠ ও পান্ডিত্যের সীমা বুঝতে কষ্ট হয় না। আমি টিবিএন২৪ এ এই কাব্যালঙ্কারকে দেখতে পাই পরলোকগত কবি সৈয়দ শামসুল ইসলামের উপর এই নগরীতে আমার প্রিয় বোনের স্বামী অনুজপ্রতীম কবি কাজী জহিরুল ইসলামের উপস্থাপনায় এক অনুষ্ঠানে। তখনই ধারণা করি ‘ঊনববাঙাল’ এর আড্ডায় ষন্ড কবির উপস্থিতি ঘটতে পারে। কাজী জহির আমাকে আড্ডার তারিখ জানালে আমি ‘বোধহয় আর যেতে পারবো না,’ মত ব্যক্ত করলে তিনি লোকটির নাম নিয়ে বললেন, উনি কিছু বলেছেন, কিন্তু আপনার সম্পর্কে তেমন নয়, সাদকে নিয়ে যে, তাকে তার মত করতে পারেনি।” কাজী জহির অনেকটা দাবী নিয়েই বললেন, তাকে বাদ দিতে পারি, আপনাকে তো বাদ দিতে পারি না।’ যাহোক ‘ঊনবাঙাল’ এর শুরু থেকে যেমন যাচ্ছিলাম, তেমনি গেলাম। কিন্তু আপত্তিকর লোকটির ভেতরের নর্দমার উৎকট গন্ধ আমার নাকে জ্বলুনি সৃষ্টি করেছে। আমি অস্বস্থি বোধ করেছি।


কিন্তু সর্পবৎ লোকটির অসূয়া বোধহয় তার হীনমন্যতাপ্রসূত অথবা আজন্ম লালিত। পৃথিবীতে এমন লোক থাকেই। ১৯৮৮ সালে সালমান রুশদির ‘স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশিত হওয়ার সময় আমি ষ্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির রিসার্চ ষ্টুডেন্ট। তখন নিই্উয়র্ক টাইমসে রুশদির উপর বিশাল একটি সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছিল। সমালোচকের বক্তব্য ছিল, “রুশদি চির অসন্তুষ্ট এবং অন্তর্দ্বন্দ্বে বিক্ষত একজন ব্যক্তি। সাহিত্যকর্মে তার চেয়ে সেরা তো নয়ই, কেউ তার সমকক্ষ হোক তাও তিনি সহ্য করতে পারেন না। যে বুকার পুরস্কার তিনি ইতোমধ্যে লাভ করেছেন তা যদি এবার অন্য কাউকে দেয়া হয়, তা হলেও তিনি প্রশ্ন তুলতে পারেন, আবারও কেন তাকেই দেয়া হলো না।” সম্প্রতি কিছু ঘটনা ঘটেছে, কাজী জহিরুল ইসলামের ৫০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানের খবর ‘সাপ্তাহিক বাংলাদেশ’ এ প্রকাশিত হলে সেটি তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে পোষ্ট করলে দেশের কোনো উপকারে না লাগা এই বিরল দেশপ্রেমিক মন্তব্য করেছে, ‘এটি একটি ইতর রিপোর্ট। তার নাম দিয়ে বলেছে —কে?” আমার দৃষ্টিতে পড়তে পারে ভেবে জহির অবাঞ্ছিত কমেন্টটি ডিলিট করে দিয়েছেন। রিপোর্টিং সম্পর্কে মুর্খ লোকটি কি করে বুঝবে যে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে রিপোর্ট লিখা হলেও প্রথমবার ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ লিখার পর যতোবার তার প্রসঙ্গ আসবে তার ক্ষেত্রে লিখা হয়, শুধু ‘প্রধানমন্ত্রী,’ এরপর ‘শেখ হাসিনা,’ এরপর শুধু ‘হাসিনা,’ আবার কখনো ‘আওয়ামী লীগ সভনেত্রী’, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা’, ‘জাতির জনকের কন্যা,’ ইত্যাদি। কিন্তু একটি ছোট্ট রিপোর্টে প্রতিবার বিশেষণ প্রয়োগ রিপোর্টিং এর সৌন্দর্য বিনাশী। তাহলে নামের ক্ষেত্রে যিনি বড় কবি তাকে ‘বড় কবি,’ মাঝারিকে ‘মাঝারি কবি,’ ছোটকে ‘ছোট কবি,’ অভিধা দিতে হবে। এই মান স্থিরের পদ্ধতি কার জানা আছে? ভদ্রতার একটা সীমা থাকা উচিত।

আমার সাংবাদিকতার বয়স ৪১ বছর। জীবনে একবারের জন্যও পেশা পরিবর্তন করিনি। সম্প্রতি কাজী শামসুল হকের উপর দর্পন কবীরের একটি ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে সদাক্ষুব্ধ কবি প্রবরের ‘পাইছি রে পাইছি” ধরনের মন্তব্য পাঠ করলাম, সেখানে নাম উল্লেখ না করে দৈনিক সংগ্রামের একজন ‘মশহুর সাংবাদিক কাম লেখক’ এর ‘থলের বিড়াল’ বের করতে উস্কানি দেয়া হয়েছে। কয়েক মাস আগে যার সংশয় ছিল আমি সাংবাদিক বা লেখক কিনা, এখন তার কাছে আমার দৈনিক সংগ্রামের মশহুর সাংবাদিক কাম লেখক’ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করলাম। দর্পন কবীর আমার প্রিয়ভাজন জুনিয়র সহকর্মী, আমি তার নিউজ এডিটর ছিলাম। ২০ বছরের অধিক সময়ের সম্পর্ক। সে বিয়ে করে তার ছোট্ট ফুটফুটে বউটি নিয়ে প্রথম আমার বাড়ির ছয়তলার ফ্ল্যাটে উঠে এবং কিছুদিন বসবাস করে। পরে নারায়ণগঞ্জে তার বিয়ের পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতায় আমিও উপস্থিত ছিলাম। এখানে দর্পন কবীর সম্পর্কে নানা অবান্তর কথাবার্তা আমার কানে আসে এবং এসব গুজবের মুখ্য অংশ ছিল বাংলাদেশে সে নাকি সাংবাদিকই ছিল না ইত্যাদি। আমি জোরের সাথে সেগুলো খন্ডন করতে চেষ্টা করি। কারণ বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় দর্পনের যোগ্যতা সম্পর্কে ভালো জানে এমন লোক নিউইয়র্কে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কেউ থাকার কথা নয়। কারণ আমাকেই তার প্রতিটি রিপোর্ট দেখতে হতো। তবে কাজী শামসুল হক সম্পর্কে দর্পন কবীরের তথ্যে একটু ভুল আছে, তা হলো, সংগ্রামে কাজী সাহেবের সাংবাদিকতা স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে মাত্র দুই বছরের। স্বাধীনতার পর তিনি আর সংগ্রামের সাথে ছিলেন না। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ঢাকার সব সাংবাদিক আমার চেনা এবং আমিও তাদের পরিচিত। কাজী শামসুল হক সম্ভবত মূলধারার সাংবাদিকতায় আর ফিরে আসেননি, বাংলাদেশে তার সাথে আমার পরিচয় ছিল না।


বিশ্বের তাবৎ জ্ঞানের অধিকারীর দাবীদার সমাজচ্যুত বা বিচ্ছিন্ন মূর্খ কবির সর্বশেষ আবিস্কার ‘সংগ্রামের চাকুরি পেতে হলে জামাত শিবিরের ক্যাডার হতে হয়।’ এই অন্তর্যামীর উদ্দেশ্যে বলতে হয়, সংগ্রাম ছাড়াও আরো তিনটি দৈনিক এবং সরকারী বার্তা সংস্থায় সাংবাদিকতা করেছি। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আমি সংবাদ বিভাগের প্রধান ছিলাম। আওয়ামী লীগের মুখপত্র হিসেবে দৈনিক বাংলার বাণীতেও নিউজ এডিটর ছিলাম। সেজন্য আমাকে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের ক্যাডার হতে হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ডাকসুর দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কোন দলের ক্যাডার বা সমর্থক না হওয়ার কারণে ডাকসু বা হল সংসদের নির্বাচনেও জিএস প্রার্থী বন্ধু আখতারুজ্জামান, হল ভিপি প্রার্থী মহসীন বা ষ্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠাতা ফিরোজের খাতিরেও ভোট দিতে যাইনি। আমার কোনো রাজনৈতিক বা অখন্ড ধর্মীয় বিশ্বাস নেই, অনেকটাই অজ্ঞবাদী। সংগ্রামের চেয়ে অধিক সময় সাংবাদিকতা করেছি অন্যান্য গণমাধ্যমে এবং ষ্ট্রিঙ্গার হিসেবে কাজ করেছি বিদেশি কয়েকটি গলমাধ্যমে। তাছাড়া ঢাকা ডাইজেষ্ট নামে আমার নিজের একটি মাসিক ম্যাগাজিন ছিল, ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা প্রকাশ করেছি। এ কারণে প্রতিষ্ঠিত কবি লেখক থেকে শুরু করে উঠতি কবি লেখকদের পৃষ্ঠাপোষকতা করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্ব অনুভব করি। আল মাহমুদ, সৈয়দ আলী আহসান, আল মুজাহিদী, বর্তমানে নিউইয়র্কের বাসিন্দা তমিজ-উদ-দীন লোদি, অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার কবি হাসান হাফিজ, কবি হালিম আজাদ, রেজাউদ্দিন ষ্টালিন, আহমদ ফারুক হাসান, রবীন্দ্র গোপ, প্রথম আলোর কবি সোহরাব হাসান, বহু গ্রন্থ প্রনেতা ডা: বুলবুল সরওয়ার, ডা: নাজিব ওয়াদুদ, স্যাটায়ার লেখক খোন্দকার আলী আশরাফ, সামরিক বিষয়ে দেশের সেরা বিশ্লেষক আবু রুশদ, বিখ্যাত গল্পকার মুজতাহিদ ফারুকী, পশ্চিমবঙ্গের আবুল বাশার, ভারতীয় লোকসভার বর্তমান সদস্য আহমদ হাসান, রাবেয়া খাতুন, কয়েকজন সচিব জাফর আহমদ চৌধুরী, ড. আইয়ুব মিয়া, ড. মাহবুবুর রহমান, ক্রীড়া বিশ্লেষক সাবেক সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস আমার ম্যাগাজিনের নিয়মিত কবি ও লেখক ছিলেন। কবি শাকিল রিয়াজ জনকন্ঠে যোগ দেয়ার আগে কবিতা লিখা ছাড়াও ডাইজেষ্টের কপি এডিটিং ও সার্কুলেশনের দায়িত্ব ছিল তার। ১৪৪ পৃষ্ঠার এই ম্যাগাজিনটির নিয়মিত সার্কুলেশন ছিল ১২ হাজার এবং বর্ধিত কলেবরে বিশেষ সংখ্যা সর্বোচ্চ ২২ হাজার কপি। জামায়াতের ভূমিকার সমালোচনা করে আমার বেশ ক’টি লিখা ডাইজেষ্টে প্রকাশিত হওয়ার পর সংগ্রাম থেকে আমার চাকুরি চলে যায়। কিন্তু আমাকে একদিনের জন্যও বেকার থাকতে হয়নি বা চাকুরির জন্য উমেদারি করতে হয়নি। জামাত ঘরানার বিরোধীরাই আমাকে ডেকে চাকুরি দিয়েছে।

ফেসবুক নির্ভর বুদ্ধিভ্রষ্ট কবি ‘খাইছি রে খাইছি’ মনোভাবে ‘ভয়াবহ’ আরেকটি খবর পরিবেশন করেছেন যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আমার ভগ্নিপতি কামারুজ্জামানের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ফাঁসি। রাষ্ট্র তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। শাস্তি কার্যকর করেছে। খবর রাখলে পাশাপাশি আরো খবর জেনে রাখা উচিত। আমারই জ্যেষ্ঠ সহোদর অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক জিএম নূরুল ইসলাম হিরু গত কয়েক বছর ধরে শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য। আমার আরেক কণিষ্ঠ সহোদর বিএনপির সমর্থনে তৃতীয় মেয়াদে এখনো ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান। আমার নামের আগে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি থাকলে বোধহয় জ্ঞানপাপী কবি সন্তুষ্ট হতে পারতেন না। সুযোগটা অল্পের জন্য হাতছাড়া করেছি।

একাত্তরের এপ্রিল মাসের শেষ দিকে আমাদের এলাকায় যখন পাক বাহিনী প্রবেশ করে তখন অনেক তরুণের মতো আমিও সীমান্ত পাড়ি দিয়েছিলাম। মুক্তিযোদধাদের ক্যাম্পে রাতও যাপন করেছি। সেটি ছিল ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যদের ক্যাম্প। আমার ভাই করতেন ছাত্র ইউনিয়ন। তাদেরকে আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের ক্যাম্পে তখনো গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি মূল ক্যাম্প থেকে তাদেরকে খাবারও সরবরাহ করা হতো না বা ভারতীয়রা তাদেরকে রেশন পর্যন্ত দিত না আওয়ামী লীগ নেতারা সুপারিশ না করায়। ফলে এপার থেকে নেয়া ও পাহাড়ি লোকদের থেকে খাবার সংগ্রহ করতে হচ্ছিল তাদেরকে। আমার ভাই আমাকে বাড়ি ফিরে পরিবারকে সাবধানে রাখার উপদেশ দিয়ে বিদায় করলেন। একই পরিবারে বহু রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসীর অবস্থান নতুন কোন ঘটনা বিশ্বজনীন ব্যাপার। এ নিয়ে অতি উৎসাহী হওয়ার কিছু নেই। আমি আমার নিজ কর্মক্ষেত্রেই যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত ছিলাম। বাংলাদেশে কে কার আত্মীয় তা জানা কঠিন কোন ব্যাপার নয়। সাংবাদিকতা ও সামান্য অনুবাদকর্ম করার কারণে একটু পড়াশুনা জানা লোকজন যে আমাকে জানেন সেজন্য আমি ধন্য বোধ করি। সে কারণে মুহাম্মদ কামারুজ্জামান যে আমার নিকটাত্মীয় ছিলেন তা দেশে ও যুক্তরাষ্ট্রে বহু লোকের জানা। আমাকে নিয়ে গবেষক পন্ডিত প্রবরকে খন্ডিত তথ্য সরবরাহকারীদের তথ্য বিভ্রান্তি দূর করতে বলছি, আমি কামারুজ্জামানের ছোট শ্যালক নই, বড়। উনি বয়সে আমার বড় ছিলেন। তার অনুপস্থিতি বা গ্রেফতারের আগে থেকেই আমি ও আমার পরিবার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী।


খ্যাতির কাঙাল লোকটিকে আমি ঘৃণা করার যোগ্যও মনে করি না। অভিশাপ দিলে যদি কাজ হতো তাহলে অভিশাপ দিতাম, ‘হে প্রভু, তুমি এই মানবরূপী কলঙ্কের মুখ বিষ্ঠা দ্বারা পূর্ণ করো।’ কারণ আমার অসুস্থ পুত্রকে নিয়ে লোকটি অনেক অমার্জনীয় কথা বলেছে। ওর বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছে। আমার পরিচিতজনদের কাছে আগ বাড়িয়ে আমার কুৎসা রটনা করেছে। আমাকে নিয়ে যাদের সাথে চর্চা করেছে তারাই বলেছে, পরচর্চা লোকটির মজ্জাগত। কখন কাকে উপরে তুলছে, কখন কার লুঙ্গি টেনে নামানোর চেষ্টা করছে তা ঠিক নেই। শুধু আমি কেন, নিজেকে বড় প্রমাণের চেষ্টারত এই নির্লজ্জ ব্যক্তিটির সামান্য সৌজন্যবোধটুকুও নেই। কাজী জহিরুল ইসলাম তার বইটি তিনজনকে উৎসর্গ করেছেন। এটি তার উদারতা। তিনটি নামের শেষ নাম বঙ্গাকাশে উদিত হতে না পারা সেই কবিরতœ? তার বয়স কতো? সাহিত্যে কি তার অবদান? মুক্তিযুদ্ধ তো দূরের কথা দেশ-সমাজের জন্য কোথায় ক’টা খুটি গেড়েছে? খুঁজে খুঁজে কাজী জহির টিভি আলোচনায় নিয়ে সম্মান দিয়েছে তার সহজাত সরলতায়। উৎসর্গের তালিকায় আমার নামটি প্রথমে দেখে আপত্তি জানিয়েছি, কারণ মাহবুব ভাই আমার বয়োজ্যেষ্ঠ। কাজী জহির তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তৃতীয় স্থানে নাম থাকার কারণেই সেই শাখামৃগের সন্তুষ্ট হওয়া উচিত ছিল। লেখক কাকে উৎসর্গ করবেন তা কি যাকে উৎসর্গ করা হবে তার নির্দেশ অনুযায়ী করবেন? তারও তো নিজস্ব বিচার বিবেচনা আছে। এরাই বলে বেড়ায় লেখকের স্বাধীনতার কথা। সে এই স্বাধীনতা লালন করে বিদ্বেষ ছড়াতে। একের বিরুদ্ধে আরেকজনকে উস্কে দিতে। সমাজকে কলঙ্কিত করতে এহেন গুটিকয়েক ইর্ষাকাতর মানুষই যথেষ্ট। গুাটকয়েকও প্রয়োজন পড়ে না। লাঙ্গুলে অগ্নি বেঁধে লঙ্কা জ্বালাতে সুগ্রীবের এক বানর সেনাই যথেষ্ট ছিল।

Published in Uncategorized

Comments are closed.