Skip to content →

গাজরের হালুয়া কাহিনী

এক ছিল টোনা আর এক ছিল টুনি। টোনা বলিল, টুনি পিঠা তৈরি করো। টুনি বলিল, তবে চাল আনো, গুড় আনো, তেল আনো, তবে তো পিঠা তৈরি করিব। টোনা বাজারে গেল, চাল আনিল, গুড় আনিল, তেলও আনিল। টুনি বেগুন গাছের শুকনো ডাল কেটে আগুন জ্বালালো, টুনি পিঠা তৈরি করিতে লাগিল ÑÑইত্যাদি।
আমারও একবার গাজরের হালুয়া খাওয়ার শখ হয়েছিল। কিন্তু আমার টুনি ছিল না। অতএব বলা হয়নি। হঠাৎ একটা টুনির আবির্ভাব ঘটলো। সে অনেক অনেক দিন আগের কথা। ১৯৮১ সালের শুরু। তখন আরবের লোকেরা তখন খেজুর খাইত। কেউ আরব দেশ থেকে খেজুর খেজুর আনলে আমরাও দুই-চারটা ভাগে পেতাম এবং নবী-রাসুলের দেশ থেকে আনা খেজুর খেয়ে সওয়াব হাসিল হয়েছে ভেবে আনন্দিত হতাম। খাওয়াও হলো। সওয়াবও পাওয়া গেল।

সবে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বোন-ভগ্নিপতির সাথে এক বাসায় থাকি। পাশেই একটা মেয়ে থাকে বলে জানি। থাকুক। আমার কি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েই কোনো মেয়ের ওপর চোখ পড়লো না। এখন কেন পড়বে। দুই অ্যাপার্টমেন্টের দরজা পাশাপাশি। কখনো দরজা খুললে মেয়েটিকে দেখি। যখন দরজা খুলে কলেজে যায় বা ফিরে আসে। আমি ক্যাসেটে আমার প্রিয় গান শুনি। কখনো কখনো বাসায় কেউ থাকে না। মেয়েটা আমার বাজানো গান শুনে। কখনো জানালার চিকের ফাঁক দিয়ে চিরকূট লিখে প্রিয় গান আবার বাজাতে বলে। আমি বাজাই। একুশে উপলক্ষে কী ভাষণ দেবে। একুশের ওপর বই চেয়ে চিরকূট পাঠায়। আমি কোনো চিরকূট পাঠাই না। তবে একদিন বলি, তুমি কি গাজরের হালুয়া বানাতে পারো? সে আগ্রহে সাড়া দেয়, খুব পারে। সেই টুনির মতো ফরমাশ দেয়, “গাজর আনুন, চিনি আনুন, কিসমিস আনুন, গুড়া দুধ আনুন, দারুচিনি-কিশমিশ এবং ভ্যানিলা অ্যান্সে আনুন।” আমি অনুগত ভৃত্যের মতো উপকরণ আনি। ভ্যানিলা কী, কোথায় পাব আমার জানা ছিল না। আবার একটা চিরকূট লিখি। পাল্টা চিরকূটে জানতে পারি কোথায় গেলে এই অদৃশ্যপূর্ব বস্তু পাবো। দশ দোকান ঘুরে পাই। গাজরের হালুয়া তৈরির প্রক্রিয়া দেখার সৌভাগ্য হয়নি। কারণ মেয়েটি বেগম রোকেয়ার আমলের অন্তপুরবাসিনীর মতো। যথাসময়ে হালুয়া পাই। খেয়ে দেখি উপাদেয় কিছু নয়। বিস্বাদও বলবো না। তবুও চিরকূটে প্রশংসা করি। এরপর আমার এক বন্ধু সাংবাদিক মোস্তফা মইনুল তারেকের সাথে গ্রীন সুপার মার্কেটে ঘোরার সময় এক রেষ্টুরেন্টে গাজরের হালুয়া সাজানো দেখি। দু’জনই খাই। অখ্যাদ্য। উভয়ের প্রতিজ্ঞা করি জীবনে আর গাজরের হালুয়া খাওয়ার কথা মুখে আনবো না। বরং কাঁচা গাজর কচকচিয়ে কামড়ে খাবো।

দিন যায়। দেশ ছেড়ে বিদেশ আসি। ২০১৪ সালে আমার কন্যাসম সাদিয়া মাহজাবীন বেড়াতে আসে। রান্না করতে আগ্রহ দেখায়। আমরা নিজেদের রান্না খেতেই বেশি পছন্দ করি। তবুও একদিন সে জেদ করেই রাতের খাবার রান্না করে। প্রধান আইটেম রুই মাছের ঝোল। খেতে গিয়ে দেখি মাছের টুকরায় খোসা রয়ে গেছে। ভাবলাম, বোধহয় আমার পাতেই এসেছে। কিন্তু না, প্রতি টুকরা খোসা বিদ্যমান। মাছ খাওয়া মাচায় উঠলো। বেচারি লজ্জা পেয়েছে। আমরা স্বচ্ছন্দ করার চেষ্টা করি। এরপর সে একদিন গাজরের হালুয়া তৈরি করে। বেশ উপাদেয়। প্রশংসা করি। খোসাসহ মাছ রান্না করার ত্রুটি মার্জনা হয়। ২০১৭ সালেও সে একবার আসে। তখনও গাজরের হালুয়া তৈরি করে।

আমার স্ত্রী কামরুননাহার মনি অনেক কোশেশ করে রান্নায় হাত পাকিয়েছে। যদিও রসগোল্লা গোল হয় না। কখনো ফেটে চৌচির হয়ে চিনির শিরার ওপর ভেসে এমনভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে, জীবন থাকলে বলতো, “আমি কী অন্যায় করেছিলাম। এখন তাঁর গাজরের হালুয়ার হাত পেকেছে। এটি গোলও করতে হয় না। আজকেরও গাজরের হালুয়া বানিয়েছে। চাল তোলা ও শ্রেডিং করা আমার কাজ। তৈরি কাজ ওর। অনেক মজার হয়েছে। আজ খেলাম। প্রশংসা করলাম। কয়েকদিন ধরেই খাবো ইনশাআল্লাহ।

Published in Uncategorized

Comments are closed.