Skip to content →

পনের বছর পর কাংখিত বই প্রাপ্তি এবং অনুবাদে বিলম্বের অজুহাত

বেশ কিছু সংখ্যক বইয়ের অনুবাদ কাজে হাত দিয়ে শেষ করতে পারিনি। একটি বই ধরেছিলাম পাঁচ বছর আগে। ৬০০ পৃষ্ঠার বেশি। অনুবাদ করার জন্য অবশিষ্ট আছে ১০ শতাংশ। কেন তীরে এসেও তরী ভেড়াতে পারিনি? কারণ মাঝে নতুন কোনো বই পড়ে এতো ভালো লেগেছে যে, সেটি অনুবাদ করতে শুরু করেছি। মাঝপথে আটকে থাকা বইগুলোর কোনোটা অর্ধেক হয়েছে। সিকি ভাগ হয়ে আছে গোটা চারেক। এগুলোর মধ্যে এমন একটি বইও আছে, যে বই অনুবাদ শুরু করার পর ট্যালিপ্যাথির কারণেই কিনা জানি না, একজন বইপোকা ব্যক্তি, যিনি জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য, তুখোড় বক্তা; তিনি অনুরোধ করলেন বইটির অনুবাদ করার জন্য। আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম, “ঘরের কথা পরে জানল ক্যামনে!” আমি যে কাজটি শুরু করেছি তাকে তা না বলে ‘অবশ্যই চেষ্টা করব’ ধরনের উত্তর দিয়েছি। আড়াই বছর আগের কথা। কিš‘ শেষ হয়নি। কারণ আগেরটির মতোই, অন্য কোনো কাজ পরে শুরু করে আগে শেষ করেছি। এ বইয়ের অর্ধেকটা শেষ করেছি। আশা করি আল্লাহ হায়াত রাখলে এ বছর শেষ করতে পারব। সিকি ভাগ অনুবাদ করা বইগুলোর কাজ এগো”েছ বাংলাদেশে শীতকালের ধীরে বয়ে চলা নদীর মতো। যে কাজ ধরি তা শেষ না করা পর্যন্ত আমার মাঝে মৃত্যু চিন্তা প্রবলভাবে কাজ করে। আস্ত একটা বইয়ের দশ/বিশ পৃষ্ঠা অনুবাদ করা বাকি থাকতেই যদি মৃত্যুর ফেরেশতা এসে ডাক দেয়, ‘চলো মিয়া, বহুত হয়েছে’। কী হবে আমার অসমাপ্ত কাজগুলোর? আমি তো আর আল্লাহর দোস্ত মূসা নই যে, মৃত্যুবরণ করার ই”ছা নেই বলে আজরাইলকে থাপ্পড় মেরে একটা চোখ খসিয়ে দেব ! আর আজরাইল আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে বলবে, হে প্রভু, আপনি যার কাছে পাঠিয়েছিলেন, সে তো মরতে চায় না।” অতএব আমাকে মরতে হবে এবং সেই চিন্তা মাথায় রেখেই আমাকে কাজ করতে হবে।

বাকি পছন্দের বই সদ্য প্রকাশিত হোক, আর পুরনো হোক, কিনে কিনে ডলার খরচ করেছি। ঘরে সাজিয়ে রেখেছি, পড়ছি। প্রায় পনের বছর যাবত খুঁজছিলাম একটি বই। দিল্লির প্রকাশনা সং¯’া ‘হিন্দ পকেট বুক’ থেকে ১৫২ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছিল ১৯৭৬ সালে। মূল্য ৬ (ছয়) রুপি। প্রকাশিত হয়েছিল ওই একবারই। আর কখনো কোনো সংস্করণ বের হয়নি। হয়তো বাজারে চাহিদা ছিল না বইটির। কিš‘ আমার কাছে এটি গুরুত্ব যথেষ্ট। ১৯৯২ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত আমার সাংবাৎসরিক দিল্লি সফরের তালিকায় ঐতিহাসিক ¯’ানগুলো পরিদর্শনের বাইরে একটি মাত্র কাজই থাকত, বই কেনা। দিল্লিতে বই কেনার সেরা জায়গাগুলোর মধ্যে খান মার্কেট, কনট প্লেস, দরিয়াগঞ্জ অন্যতম। চষে বেড়াতাম জায়গাগুলো। কিন্ত দরিয়াগঞ্জের পুরনো বইয়ের দোকানগুলোতেও আমার কাক্সিক্ষত বইটির সন্ধান পাইনি। কেউ নামই শোনেনি। ইন্টারনেটের কল্যাণে বইটির সন্ধান পাই। আমাজন মূল্য দেখায় ১২৪ ডলার ৯৯ সেন্ট। এর সাথে আরও ৪/৫ ডলার যোগ হবে শিপিং চার্জ। সাধ্যের বাইরে। কিš‘ মাথা থেকে বইটির চিন্তা নামিয়ে ফেলতে পারি না। অবসর পেলেই নেটে বইটি খুঁজি।

অবশেষে “লাইট অ্যাট দ্য এন্ড অফ দ্য টানেল।” কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরী সিস্টেমসে বইটির অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। নিউইয়র্ক সিটির পাঁচটি বরোর মধ্যে কুইন্স বরো জনসংখ্যা ও বৈচিত্রে বেশি সমৃদ্ধ। কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরীও একইভাবে সমৃদ্ধ। এটির শাখা আছে ৬২টি এবং বইয়ের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। কুইন্স লাইব্রেরীর বেশ ক’জন বাংলাদেশী কর্মকর্তা আমার পরিচিত। তাদের মধ্যে আবদুল্লাহ জাহিদ অন্যতম। তিনি ময়মনসিংহের লোক। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন ফিশারিজ এ। যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর লাইব্রেরী সায়েন্সে ডিগ্রি নিয়ে কুইন্স লাইব্রেরীর হলিস শাখার ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তাকে বলার পর তিনি বললেন, বই থাকলে অবশ্যই পাওয়া যাবে। ক’দিন পর তিনি জানালেন, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরী সিষ্টেমসে বইটি নেই। তবে সাইরাকিউজ ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরীতে আছে। ওখান থেকে নিয়ে আসা কোনো সমস্যা নয়। বইয়ের ইন্টার-লাইব্রেরী লোন ব্যব¯’ার আওতায় যে কেউ সহজে তার প্রয়োজনীয় বই ধার নিতে পারেন। আমার খরচ হবে ২৫ ডলারের মতো। লাফিয়ে উঠার মতো খবর। বয়স ভাটির দিকে বলে লাফ দেইনি। তবে আনন্দ-উত্তেজনায় হৃদপি- বক্ষপিঞ্জর বিদীর্ণ করে বের হওয়ার মতো হয়েছিল। তাকে বলি ‘কুচ পরোয়া নেই,’ আপনি নিয়ে আসুন। ক’দিন পর বইটি আসে। তিনি আমাকে খবর দেন। প্রায় কাজ ফেলেই লাইব্রেরীতে যাই। তিনি জানান, ২৫ ডলার নয়, ১২ ডলার দিলেই চলবে। ফেব্রুয়ারীর প্রথম সপ্তাহে বইটি ইস্যু করা হয়েছে। আমি মে মাস পর্যন্ত রাখতে পারব। লাইব্রেরীতেই স্ক্যানার আছে। আমি ই”েছ করলে বিনা খরচে স্ক্যান করে পেনড্রাইভে নিয়ে আসতে পারি অথবা চার মাস বইটি আমার কাছে রেখে আমার প্রয়োজন সেরে নিতে পারি। আমাকে দীর্ঘ পনেরটি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বইটি পেতে। আহ, প্রাপ্তির কী পরম পরিতৃপ্তি!

চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে পড়ে শেষ করলাম। সব অনুবাদ ¯’গিত রেখে এটি অনুবাদ করতে হবে। বইটির নাম উল্লেখ করছি না। আমি অপেক্ষা করেছি পনের বছর, বাংলাভাষী পাঠকদের এতো দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না, ইনশাল্লাহ!

বইটির জন্য যদিও আমাকে মাত্র ১২ ডলার খরচ হয়েছে (এখনো হয়নি, বই জমা দেয়ার সময় পরিশোধ করতে হবে), এখানেই শেষ বলা যাবে না। বইয়ের সাথে একটি লেবেল সেঁটে দেয়া হয়েছে। বইটি হারালে কতো জরিমানা দিতে হবে লেবেলে সে কথা বলা হয়নি। লেবেলটি খুলে ফেললে বা হারালে জরিমানা দিতে হবে ১০০ ডলার। আনুসঙ্গিক রশিদ ও স্লিপসহ বইটি যে এনভেলাপে ভরে ফেরত দিতে হবে সেই এনভেলাপও সরবরাহ করা হয়েছে। অন্য কোনো এনভেলাপ গ্রহণযোগ্য হবে না।

Published in Uncategorized

Comments are closed.