Skip to content →

বেলমন্ট লেক স্টেট পার্কে আমাদের রোববার

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

গত সপ্তাহের রোববারের পর আজও একটি পারিবারিক পিকনিকে অংশগ্রহণের সুযোগ হলো। এবারের গন্তব্য ছিল বেলমন্ট লেক ষ্টেট পার্ক। এ পার্কের নাম অনেক শুনেছি। কিন্তু আগে কখনো যাওয়া হয়নি। আমার বাড়ি থেকে পার্কের দূরত্ব ৩০ মাইল। নিউইয়র্ক সিটিতে বাস ও সাবওয়ে ব্যবহার করে নগরীর বড় বড় পার্ক Ñ ম্যানহাটানের সেন্ট্রাল পার্ক ব্রঙ্কসের ভ্যান কর্টল্যাণ্ডট পার্ক ও পেলহাম বে পার্ক, ব্রুকলিনের প্রসপেক্ট পার্কসহ আরো অনেক পার্কে গেছি। প্রায় সাড়ে আটশ একর জমির ওপর গড়ে সেন্ট্রাল পার্কের নাম দুনিয়া জুড়ে মানুষ জানে, যেখানে বছরে প্রায় ৫ কোটি মানুষ ঘুরতে যায়। কিন্তু নগরীর সববেয়ে বড় পার্ক আটলান্টিকে কোল ঘেষে গড়ে তোলা ২,৭৭২ একর আয়তনের পেলহাম বে পার্কে সেন্ট্রাল পার্কের তুলনায় অনেক কম মানুষ যায়। কর্টল্যাণ্ডট পার্কেও আয়তনও প্রায় ১,২০০ একর, সেন্ট্রাল পার্কের দ্বিগুণ। কিন্তু সেখানেও জনসমাগম কম। ৫২৭ একর বিশিষ্ট প্রসপেক্ট পার্কে বরং গ্রীস্মের মাসগুলোতে বেশ ভিড় থাকে।

আমার যেহেতু গাড়ি নেই বা গাড়ি চালাই না, সেজন্য গণপরিবহনে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে কেউ যদি আমাকে ভাই, বন্ধু বা মুরুব্বি ভেবে কেউ সাথে নেন, তাহলেই আমি পিকনিকের মতো নির্মল বিনোদনে তাদের সঙ্গী হওয়ার সুযোগ পাই। গাড়ি না চালানোর ব্যাপারে আমার অনিচ্ছা এবং একগুঁয়েমি আছে। পাশ্চাত্যের যে কোনো দেশে এমনকি দরিদ্রতম লোকেরও গাড়ি থাকে, কারণ গাড়ি ছাড়া বলতে গেলে চলার উপায় নেই। আমি চালাই না, যেহেতু আমি চালাবো না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশে আমার স্ত্রী-পুত্র গাড়ি চালিয়েছে; কিন্তু আমি কখনো ষ্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়েও দেখিনি। আমার প্রিয় খ্যাতিমান এক আমেরিকান সায়েন্স ফিকশন ও ফ্যান্টাসি লেখক, বিজ্ঞানময় কল্পনা শোনার জন্য ‘নাসা’র বিজ্ঞানিরা যার কাছে ধর্ণা দিতেন, সেই রে ব্র্যাডবারি (জধু ইৎধফনঁৎু) ২০১২ সালে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করার পর জানতে পারি, তিনিও জীবনে কখনো গাড়ি চালাননি। তাঁর একটি গ্রন্থ আছে ‘ফারেনহাইট ৪৫১,’ এবং এ নামেই তাঁর গ্রন্থ-ভিত্তিক একটি মুভিও আছে। আগ্রহীরা মুভিটি দেখতে পারেন। ব্র্যাডবারি সম্পর্কে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, “আধুনিক সায়েন্স ফিকশনকে সাহিত্যের মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে রে ব্র্যাডবারি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।”

গত পিকনিকে একটি শিশুসহ আমরা ১২ জন ছিলাম। এবার মাত্র ৭ জন। কবি কাজী জহিরুল ইসলামের বড় গাড়িতে সবার জায়গা হয়েছে। কবি জহিরের স্ত্রী মুক্তি জহির, তাদের দুই কন্যা সারাফ ও নভো। আমি ও আমার স্ত্রী কামরুননাহার মনি এবং কবি মাহবুব হাসান। কথা ছিল, এবারও গত সপ্তাহের অংশগ্রহণকারীরাই থাকবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে জরুরী কাজে আটকা পড়ায় রাজিয়া নাজমী ও তাঁর স্বামী ফেরদৌস নাজমী, ফজলুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী এবং ইমিগ্রেশন রাইটস এক্টিভিস্ট কাজী ফৌজিয়া আসতে পারেনি। আমরা দু:খিত হয়েছি। বেলমন্ট লেক ষ্টেট পার্কও বেশ বড়সড়। ২৯ একরের একটি লেকসহ পার্কের আয়তন ৪৬৩ একর। আগে এটি একটি শস্য খামার, রেসকোর্স ও রেসের ঘোড়া উৎপাদনের প্রজনন কেন্দ্র ছিল। এর মালিক ছিলেন অগাস্ট বেলমন্ট এবং পরবর্তীতে তাঁর পুত্র অগাস্ট বেলমন্ট জুনিয়র। ১৯৩৫ সালে জায়গাটিকে পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।

আমরা দুপুর ১২টার পর পার্কে পৌঁছি। ততোক্ষণে পার্কের ঘন গাছের ছায়ায় এবং লেকের পাশের জায়গাগুলো ভরে গেছে। লেক সাইডে বেশি ভিড়। অনেকে ভোজনে ব্যস্ত, অনেকে বারবিকিউ করছে। লেকে অনেক প্রজাতির বড় বড় হাঁস, যেগুলো হাতের নাগালের মধ্যে চলে আসে, বাচ্চারা বেশ উপভোগ করে, পানিতে খাবার ছিটিয়ে দিলে হাঁসেরা প্রতিযোগিতা করে খায়। বিভিন্ন বয়সের অনেক নরনারী প্যাডেল বোট ভাড়া করে তাদের পোষা কুকুরসহ লেকের পানিতে ভাসছে। বোট ভাড়া নেয়ার জন্য কৌতুহলী মানুষের দীর্ঘ লাইন।

স্যাণ্ডউইচ, তরমুজ, আম ভর্তা ও চা খেয়ে আমরা লেকের পাশ দিয়ে, জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটলাম, ছবি তুললাম। বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করা দেখলাম। আমাদের দখল করা জায়গায় ফিরে এসে সালাদ ও আচার সহযোগে খিচুরি ও গুরুর গোশত ভূনা দিয়ে বেশ আয়েশ করেই দুপুরের ভোজ সেরে শুয়ে বসে কবিতা ও গান নিয়ে আলোচনা করে কাটালাম বিকেল প্রায় ৫টা পর্যন্ত। সারাফ ও নভো খানিক সময় দোলনায় দুললো। ছয়টার দিকে আমরা বাড়ির পথ ধরলাম। .

Published in Uncategorized

Comments are closed.