Skip to content →

ইশ্বরের অভিশাপ হান শাসক অ্যাটিলা

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু’

ইতিহাসের অন্যতম জঘন্য এক চরিত্র ‘হান’ সাম্রাজ্যের শাসক অ্যাটিলা (জন্ম: ৪০৬-মৃত্যু ৪৫৩ সাল), যিনি তার বর্বরতা ও নৃশংসতার কারণে ‘ইশ্বরের অভিশাপ’ ও দানব হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন। এক সময়ের প্রচণ্ড শক্তিশালী রোমান সাম্রাজ্য অ্যাটিলার ভয়ে সন্ত্রস্ত ছিল। কারণ পঞ্চম শতাব্দীর মধ্যভাগে তিনি ক্ষয়িষ্ণু রোমান সাম্রাজ্যকে প্রায় ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছিলেন। তিনি বাল্টিক থেকে বলকান, রাইন নদী থেকে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত বিশাল ভূখণ্ড জুড়ে তার সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিলেন। অ্যাটিলা হাঙ্গেরীর দক্ষিণাঞ্চলে তার সদর দফতর প্রতিষ্ঠা করে চারটি বড় ধরনের এবং অসংখ্য ছোটখাট অভিযান চালান রোমের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে। কিন্তু তিনি তার অর্জন মাত্র আট বছরের জন্য ভালোভাবে টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। রোমান সাম্রাজ্যের মাত্র কয়েক একর জমি ছাড়া তিনি কখনো রোমকে নিজের সাম্রাজ্যভূক্ত করতে পারেননি এবং ৪৫৩ সালে তার মৃত্যুর সাথে সাথে হান সাম্রাজ্যের অবসান ঘটেছিল। তিনি বিশ্বকে শাসন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সামরিক অর্জনকে সফলভাবে কাজে লাগাতে ও স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। যদিও বলা হয় যে অ্যাটিলা “পৃথিবীতে এসেছিলেন জাতিসমূহকে প্রকম্পিত করতে,” কিন্তু শেষপর্যন্ত কূটনীতির কাছে তাকে মাথা নত করতে হয়েছিল। হান সাম্রাজ্য টিকে থাকেনি।

অ্যাটিলা কেন ব্যর্থ হলেন এবং কী কারণে তার কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল? 

এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় অ্যাটিলার উত্থানের মধ্যে। চতুর্থ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ার সমতল তৃণভূমিতে অজ্ঞাত এক অবস্থা থেকে হান বংশের উত্থান ঘটে। সম্ভবত তার পূর্বপুরুষদের জিওনগুঁ (Xiongnu) বলা হতো, যারা তিনশ’ বছর পর্যন্ত মঙ্গোলিয়ায় উল্লেখযোগ্য আয়তনের ভূখণ্ডের ওপর শাসন কাজ পরিচালনা করেন। চীনের হামলায় জিওনগুঁর সাম্রাজ্য ভেঙে যায়। হান’রা যদি জিওনগুঁদের উত্তরসূরী হয়ে থাকে, তাহলে মনে হয় তারা তাদের অতীত ঐশ্বর্য ও ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে মঙ্গোলিয়া থেকে পশ্চিম দিতে চলে যায়। যাযাবর পশুপালক, অশ্বচালনায় ক্ষিপ্রতা ও তীরন্দাজিতে নিপূণ লক্ষ্যভেদে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে ৩৭৫ সালের দিকে তারা গ্রীকদের দৃষ্টিতে পড়ে। ৩৭৮ সালে অ্যাড্রিয়ানোপল (বর্তমান তুরস্কের অ্যাড্রিন) দখলের অভিযানে তারা জার্মানদের সঙ্গে যোগ দেয়। রোমের অবস্থা তখন শোচনীয় ছিল। একশ বছর আগে থেকেই রোমান সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল। ল্যাটিন ও গ্রিকদের মধ্যে সাম্রজ্য পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে ৩৩০ সালে সম্রাট কন্সট্যান্টাইন যখন ‘নতুন রোম’ কন্সটান্টিনোপল প্রতিষ্ঠা করেন। ৩৬৪ সালে রোমান সাম্রাজ্যের দুই অংশ দু’জন সম্রাট পৃথক পৃথকভাবে শাসন কাজ পরিচালনা শুরু করলে বিভাজন আরও বিস্তৃত হয়। রাইন ও দানুরী নদী পেরিয়ে আসা বিভিন্ন জার্মান উপজাতির অব্যাহত হামলা থেকে বিভক্ত রোম সাম্রাজ্যকে রক্ষা করার জন্য রোমানদের পারিবারিক বন্ধন ও ইতিহাস-ঐতিহ্য যথেষ্ট ছিল না। হান যোদ্ধারা তাদের সাথে যোগ দেওয়ার পর রোমের ওপর হুমকি আরও বৃদ্ধি পায়। কারণ তখন তাদের সাথে যুক্ত হয়েছিল বর্তমান কাজাখস্তান ও ইউক্রেন থেকে আগত তুর্কি বংশোদ্ভুতরা। তারা বর্তমান হাঙ্গেরী পর্যন্ত চলে যায় এবং সেখানে ৪৪৪ অথবা ৪৪৫ সালে অ্যাটিলা তার শাসনের সম-অংশীদার তার ভাই ব্লেডাকে হত্যা করে হান সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে ওঠেন। তিনি বাহিনীর আকার এতো বৃদ্ধি পায়, যার সমতূল্য কোনো বাহিনী ওই সময়ের বিশ্বে দ্বিতীয়টি ছিল না। 

অ্যাটিলা সম্পর্কে খুব বেশি জানা না গেলেও ইতিহাসবিদরা তাকে ক্ষমতাশালী যুদ্ধবাজ নেতা ও ধূর্ত রাজনীতিবিদ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হান জাতির রাজা রুগিলা ছিলেন অ্যাটিলার চাচা। শৈশব থেকেই অ্যাটিলা ও তার ভাই ব্লেডা অশ্বচালনায় চৌকস হয়ে ওঠেন। যুদ্ধের সকল কৌশল আয়ত্ত করেন দুই ভাই। ৪৩৪ সালে রাজা রুগিলা মৃত্যুবরণ করলে দুই ভাতিজা তাঁর উত্তরাধিকারী হন। একসাথে শাসনকাজ চালানোর দশ বছর পর অ্যাটিলা তার ভাইকে হত্যা করেন। অ্যাটিলা উদ্যোগী ছিলেন এবং বহু উপজাতিকে নিয়ে শক্তিশালী এক কনফেডারেশন গড়ে তোলেন। বিভিন্ন উপজাতিকে তার মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য তিনি নিজে বহুসংখ্যক স্ত্রী গ্রহণ করেছিলেন। 

অপরাধ সংঘটনে তার জুড়ি ছিল না। তার শত্রুদের ওপর নিষ্ঠুরতা চালিয়ে তিনি তাদের সম্পদ কেড়ে নিতেন তার বিশাল সামরিক বাহিনীকে সজ্জিত করার জন্য। চাচার অধীনে থাকাকালেই অ্যাটিলা বুঝে ফেলেছিলেন যে শুধু হুমকি দিয়েই রোমান সাম্রাজ্য থেকে বিপুল পরিমাণে নগদ অর্থ আদায় করা সম্ভব। তিনি পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সম্রাট দ্বিতীয় থিওডোসিয়াসের ভূখণ্ড দখলের হুমকি দেওয়ার পর থিওডোসিয়াস নিজেকে হানদের হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য ৪২০ থেকে ৪৩০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে বার্ষিক ৩৫০ পাউ- করে স্বর্ণ প্রদান করেন। অ্যাটিলা হান সাম্রাজ্যের শাসকে পরিণত হওয়ার পর সম্রাট দ্বিতীয় থিওডোসিয়াস ৪৪২ সালে অ্যাটিলাকে ১,০০০ পাউন্ড স্বর্ণ প্রদান করেন। ৪৪৭ সালে থিওসোডিয়াস অ্যাটিলাকে স্বর্ণ দিতে অস্বীকার করলে তিনি তার সেনাবাহিনীকে সরাসরি বলকান এলাকায় নিয়ে যান এবং শহর-গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে শুরু করেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোমান সম্রাট থিওডোসিয়াস দ্রুত অ্যাটিলার অধীনতা স্বীকার করে বকেয়া পরিশোধ করাসহ নতুন করে স্বর্ণ প্রদান শুরু করেন। অ্যাটিলা এ সময় রোম সম্রাটের ওপর বার্ষিক ২,১০০ পাউন্ড স্বর্ণ পরিশোধ করার আদেশ দিয়েছিলেন। অ্যাটিলার সাথে দরকষাকষি করার মতো সাহস ও শক্তি রোম সম্রাট থিওডোসিয়াসের ছিল না। 

একটি বিষয়ে অ্যাটিলা অত্যন্ত সতর্ক ছিলেন, যাতে তার লোকজনের ওপর রোমান ভোগবিলাসের কোনো প্রভাব না পড়ে। তিনি সীমান্ত এলাকার গতিবিধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং আদেশ জারি করেন যে কোনো হান রোমান ভূখণ্ডে বাস করতে পারবে না অথবা রোমান সেনাবাহিনীতে চাকুরি গ্রহণ করতে পারবে না। হানদের মধ্য থেকে যদি কোনো সৈনিক পক্ষ ত্যাগ করে যদি রোমান এলাকায় প্রবেশ করে তাহলে শাস্তি ভোগ করার জন্য তাকে তার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি রোম সম্রাট দ্বিতীয় থিওডোসিয়াসকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সীমান্ত বরাবর একটি নিরপেক্ষ এলাকা গড়ে তোলার জন্য, যাতে হান ও রোমানরা কোনো বিষয়ে সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করতে না পারে। এর ফলে হান ও রোমানদের মধ্যে প্রচণ্ড সাংস্কৃতিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছিল। হান প্রশাসনের সঙ্গে কোনো চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে ও নিরাপত্তা কর পরিশোধের জন্য রোমান দূতদের যেতে হতো অ্যাটিলার রাজধানী বর্তমান বেলগ্রেডের কাছে মারগাসে। 

কন্সটান্টিনোপল থেকে অ্যাটিলার দরবারে প্রেরিত পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যের দূত প্রিসকাস হান সম্রাটের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তাকে বর্ণনা করেছেন, “বিজ্ঞ উপদেষ্টা, অনুগতদের প্রতি ক্ষমাশীল” বলে। প্রিসকাসের মতে অনেকে হানদের জীবনযাত্রা রোমানদের চেয়ে উত্তম বলে মনে করেন। কারণ হান সাম্রাজ্যে দুর্নীতি, অন্যায় ও অধিক করের বোঝা ছিল না। অ্যাটিলার জীবদ্দশায় তার সাম্রাজ্য বাণিজ্য সফল ছিল। প্রিসকাস তার নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেছেন, “বেশ ক’দিন অপেক্ষা করার পর বিশাল এক মিলনায়তনের বিদেশি দূতদের আমন্ত্রণ জাসানো হয় ভোজসভায় অংশগ্রহণ করার জন্য। অ্যাটিলার পরনে সাধারণ পোশাক এবং কোনো অলঙ্কার ছিল না তার শরীরে। ভোজসভায় সকলের দৃষ্টিতে পড়ে এমন একটি উঁচু আসনে তিনি বসেন। রূপার থালায় অতিথিদের বিলাসিতাপূর্ণ খাবার সরবরাহ করা হয়। অ্যাটিলা যেহেতু এ ধরনের ভোজের নাটকীয়তা সম্পর্কে সবসময় সচেতন, এবং কৃচ্ছতায় বিশ্বাসী, সেজন্য তিনি একটি কাঠের থালায় শুধু মাংস ছাড়া আর কিছু খান না। অতিথিদের সোনার পাত্রে পান করতে দেওয়া হলেও অ্যাটিলা পান করেন কাঠের তৈরি পানপাত্রে।”

ইতিহাসবিদরা তাকে “ইশ্বরের অভিশাপ” হিসেবে বর্ণনা করলেও অনেকে তার বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ও উচ্চাকাঙ্খী বলে মনে করেন। লুণ্ঠনের প্রতি তার ভীষণ আসক্তি ছিল। তিনি চেয়েছিলেন বিশ্বের যতোটা এলাকা সম্ভব তার করায়ত্ত্বে আনতে এবং তার এই আকাক্সক্ষা এতো প্রবল ছিল যে, প্রচণ্ড প্রতিকূলতা আছে জেনেও তিনি ঝুঁকি গ্রহণ করতে কখনো পিছু হটেননি। তার এ অভিলাষ পুরোপুরি ব্যক্তিগত ছিল তা বলা চলে না। বরং এটি ছিল তার রাজনৈতিক প্রয়োজন। তিনি অস্থির উপজাতি ও যুদ্ধবাজ উপজাতি প্রধানদের সন্তুষ্ট রাখতে ও লুটতরাজ করতে সবসময় যুদ্ধের প্রস্তুতির মধ্যে থাকতেন। প্রথমে তার লক্ষ্য ছিল শুধু সম্পদ অর্জনের জন্য ছোটখাট সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া, এরপর আসে যুদ্ধ এবং সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বড় ধরনের বিজয় অর্জনের জন্য তার সেনাবাহিনীর আকার বৃদ্ধি করতে হয়। কিন্তু বিজয়ের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতাও আসে। অ্যাটিলার প্রয়োজন ছিল সরকার পরিচালনার কৌশল আয়ত্ত্ব করা। তার জনগণের মৌলিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তন আনা ছাড়া তার পক্ষে নগরী প্রতিষ্ঠা এবং পাশ্চাত্যের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন করা ছাড়া তার সাম্রাজ্যকে যুদ্ধের হুমকি ও সম্ভাব্য পরাজয় বরণের ঝুঁকি থেকে কখনো নিরাপদ রাখা সম্ভব ছিল না। অ্যাটিলা অবশ্যই কিছু সচিব ও দূত নিয়োগ করেছিলেন রাজনৈতিক বিষয়গুলোর দেখাশোনা করার জন্য। কিন্তু একজন অশিক্ষিত, বর্বর যুদ্ধবাজ নেতার পক্ষে জীবনকে স্থির করা সম্ভব হয়নি। সবকিছুতে তার একমাত্র সমাধান ছিল যুদ্ধ। অ্যাটিলা রোমের পশ্চিম অংশে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ৪৫১ সালে তিনি বিশাল হান সেনাবাহিনী নিয়ে রাইন নদী অতিক্রম করেন। পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য তাকে যথেষ্ট সম্মান দিচ্ছিল না। হান সৈন্যরা অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড শুরু করে।   

অ্যাটিলার হামলায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সম্রাট তৃতীয় ভেলেনশিনিয়ার সদ্য তরুণী বোন জাস্টা গ্রাটা হোনোরিয়া। তিনি তার ভাইয়ের প্রতি ইর্ষান্বিত ছিলেন। সবকিছু থাকা সত্বেও তার প্রকৃত কোনো কর্তৃত্ব ছিল না, যা তাকে অস্থির করে তুলেছিল। রোমান দরবারের কর্মকতা ইউজেনিয়াসের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক সম্রাটের কানে পৌছলে ইউজেনিয়াসকে হত্যা করে দরবারের এক উপদেষ্টার সঙ্গে তার বিয়ে স্থির করা হয়। হোনোরিয়া ভাইয়ের প্রতি প্রতিশোধ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে অ্যাটিলার গল আগমনের খবর জানতে পেরে হায়াসিন্থাস নামে এক খোজাকে অ্যাটিলার কাছে পাঠান এবং ঘৃণ্য বিবাহ সম্পর্ক থেকে তাকে উদ্ধার করার বিনিময়ে অর্থ প্রদান প্রস্তাব ও অ্যাটিলাকে বিয়ে করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। হোনোরিয়ার পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে হায়াসিন্থাস ফিরে আসার পর তাকে হত্যা করা হয়। হোনোরিয়ার প্রস্তাবকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে তিনি ভেলেনশিনিয়াকে খবর পাঠান হোনোরিয়াকে সম্রাটের সম মর্যাদায় শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠার এবং জাস্টা গ্রাটা হোনোরিয়াকে বিয়ে করার যৌতুক হিসেবে সাম্রাজ্যের অর্ধেকটা তার হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তিনি সম্রাটের প্রাসাদকে তার জন্য প্রস্তুত করতেও নির্দেশ দেন। অ্যাটিলার সব দাবি রোম সম্রাট প্রত্যাখ্যান করেন। 

৫৪১ সালের ২০ জুন অ্যাটিলার বাহিনী ফ্রান্সের উত্তর-পূর্ব দিকে কাতালাওলিয়ানের সমতলে রোমান বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। উভয় পক্ষে এক লাখ ষাট হাজারের অধিক সৈন্য নিহত হয়। এ যুদ্ধে অ্যাটিলার বাহিনী পরাজিত হয়। পরের বছর আরও বড় শক্তি নিয়ে অ্যাটিলা রোমান সাম্রাজ্যের ওপর হামলা চালাতে আসেন। তার এবারের লক্ষ্য ছিল ইটালির উত্তরাঞ্চল ও রাজধানী রোমে অভিযান পরিচালনা। পো উপত্যকায় কয়েক ডজন নগরী দখলের পর ব্যাধি ও খাদ্যাভাবে হানদের থামতে হয়। অ্যাটিলা এবার সামরিক পরাজয় বরণ করেননি। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করে হাঙ্গেরীতে ফিরে যেতে। অ্যাটিলা সম্ভবত ফিরে না গেলেও পারতেন। কারণ সম্রাট ভেলেনশিনিয়া নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে, অ্যাটিলার দাবি মেনে নিয়ে জাস্টা গ্রাটা হোনোরিয়াকে তার সাথে বিয়ে দিয়ে যৌতুক হিসেবে স্বর্ণ প্রদানের প্রস্তাব পাঠানো অবস্থায় ছিলেন। অ্যাটিলা তার পক্ষ থেকে সম্ভবত ইটালি ছেড়ে যেতেও প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু তার সেনাবাহিনী ভেঙে পড়তে শুরু করেছিল। 

এই যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার মধ্য দিয়ে অ্যাটিলার শাসনের অবসানের সূচনা হয়েছিল। হাঙ্গেরীতে ফিরে আসার অল্প কিছুদিন পরই ৪৫৩ সালে তিনি একটি নতুন স্ত্রী গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার শেষ স্ত্রী এবং তার নাম ছিল ইলডিকো, যিনি সম্ভবত কোনো জার্মান রাজকন্যা ছিলেন। বিয়ের রাতে তিনি অত্যন্ত উৎফুল্ল ছিলেন। বাসর ঘরে তিনি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েন এবং সকালে পরিচারকরা গিয়ে তাকে মৃত দেখতে পায়। ইলডিকো তার পাশে বসে কাঁদছিলেন। ইতিহাসে তার মৃত্যু নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ রয়েছে। কেউ বলেছেন তার ফুসফুসে রক্ত জমা হয়েছিল এবং নাক দিয়ে রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মারা গেছেন। অনেকে বলেছেন, অধিক মদ্যপানে তিনি মাতাল অবস্থায় ছিলেন এবং যৌনসঙ্গমের আতিশয্যে হৃদপি- স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার মাতাল হওয়ার তত্ত্বের সঙ্গে অনেকে একমত নন। কারণ অ্যাটিলা কৃচ্ছসাধনে অভ্যস্ত ছিলেন এবং অতিরিক্ত পানভোজন করতেন না। ইলডিকো তাকে হত্যা করে থাকতে পারে বলেও মতবাদ রয়েছে। 

অ্যাটিলার মৃত্যুতে হান’রা তাদের মহান ও জাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী নেতাকে হারিয়েছিল। কয়েক বছরের মধ্যে তাদের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়তে শুরু করে। এটি আর সহিংস, আক্রমণাত্মক সাম্রাজ্য হিসেবে টিকে থাকতে পারেনি, বরং নামে মাত্র রাজ্য হিসেবে অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল।

Published in Uncategorized

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *