Skip to content →

কখন হানা দেবে আজরাইল ও যমরাজ?


আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

মৃত্যুভীতি পৃথিবী জুড়ে মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে মৃত্যুর ভীতি এক ধরনের — এ মৃত্যু হঠাৎ আসে। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে বোঝা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু আসন্ন। তার মৃত্যুতে পরিবার দু:খ করে। আবার মৃত্যু কখনও কোনো আভাস না দিয়েই আসে। সুস্থ মানুষ হাসিখুশি বাড়ি থেকে বের হয়ে অথবা দিন শেষে কাজ সেরে ফেরার পথে দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে মারা যায়। অনেক সময় দুর্ঘটনা কবলিত হয়ে পরিবারশুদ্ধ সকলে মারা পড়ে। তাদের কবরস্থ করা বা চিতায় আগুন দেয়ার মতো আপনজন পাওয়া যায় না। করোনার মতো মহামারীর সময় মৃত্যুভীতি সর্বব্যাপী রূপ নেয়, যা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কে কখন তার ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী আজরাইল বা যমরাজের হাতে পড়বো তা কেউ জানি না। যেভাবেই হোক মানুষকে মরতে হবেই। এই অধ্যায় থেকে কারও কোনো নিস্কৃতি নেই। কোরআনে বলা হয়েছে: “কুল্লু নাফসিন জায়েকাতুল মউত,” (প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে: আল—ইমরান, আয়াত ১৮৫)।“মৃত্যুর স্বাদ” শুনতে ভীতিকর মনে হলেও “স্বাদ” শব্দটি এককভাবে উপভোগ্য “যদি তা খাদ্যের স্বাদ, ফুলের সুগন্ধি নেয়ার মতো কোনোকিছু হয়। কিন্তু “মৃত্যুর স্বাদ” এর অর্থ জীবনের অবসান। মরণাপন্ন মানুষকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য আপনজনদের কতো চেষ্টা। যারা উচ্চ সামর্থ সম্পন্ন তারা সংশ্লিষ্টের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানে উদ্ভাবিত সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করতে অকাতরে অর্থ ব্যয় করেন এবং অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার হলো ওই রোগীর মৃত্যুর পর তারাই বলেন, “মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি তাঁর মেহমান হয়েছে।” অথবা হিন্দুরা আকাশ পানে হাত তুলে বলেন, “ভগবানের তাকে নিজের কাছে ডেকে নিয়েছেন।” মৃতের আত্মীয়—স্বজনের কথা শুনে মনে হয়, ‘আহা, মানুষগুলো কী দারুন ইশ্বর ভক্ত!’

সুরা আল—ইমরানের মৃত্যু সংক্রান্ত আয়াতটির উদুর্ তরজমা খুব মজার। পাঠকদের কাছে নিবেদন করার ইচ্ছা আড়াল করতে পারছি না: “হর জানদার কো মউত কি মজা চাখনা হ্যায়/আউর তুমহে ক্যায়ামত কে দিন পুরে পুরে বদলে মিলেঙ্গে/ফির জো কোঈ দোজখ সে দূর রাখা গ্যায়া/আউর জান্নাত মে দাখিল হুয়া সো ও পুরা কামিয়াব হুয়া/দুনিয়া কি জিন্দেগি তো ধোকে কে মাল কে সিবা কুচ ভি নেহি হ্যায়।” [প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর মজা চেখে দেখতে হবে/যা করেছো কিয়ামতে তার পরিপূর্ণ কর্মফল পাবে/কাউকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে; যে পুরোপুরি সফল তাকে পাঠানো হবে বেহেশতে/পৃথিবীর জীবন তো ধোঁকার সম্পদ ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়।]

আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি যে জীবন ও মৃত্যু নিয়ে আমরা নিজেদের সঙ্গেই প্রতারণা করি। বেঁচে থাকতে আমরা অধিকাংশই আমাদের সৃষ্টিকর্তার তোয়াক্কা করি না; কিন্তু আমাদের আপন বা পরিচিত কেউ মৃত্যুবরণ করলে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” উচ্চারণ করি; মৃতদের আল্লাহর কাছে সোপর্দ করি। এমনকি যাদেরকে সৎ লোক বা ‘ফেরেশতা আদমি’ বলেও জানি তাদেরও সকল গুনাহ খাতা ক্ষমা করে তাকে জান্নাতুল ফিরদৌসে দাখিল করার জন্য মোনাজাত করি। কী অদ্ভুত চরিত্র কেমন বৈপরীত্যে ভরা। ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুতে আমার ভয় নেই। আমি ধর্মচর্চায় একটু শিথিল হলেও বিশ্বাসে আমার ঘাটতি নেই। সে বিশ্বাসের মূল যেহেতু “জীবন ও মৃত্যুর মালিক আল্লাহ”, অতএব যখন যেখানে যেভাবে মৃত্যু হোক না কেন তাতে আমার বা আমার স্বজনদের নিয়ন্ত্রণ নেই। মৃত্যু অবধারিত সত্য। আমাকে বিবেক ও বিবেচনা বোধে সমৃদ্ধ করা হয়েছে, সেটুকু দিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা ছাড়া আমার করণীয় কিছু নেই।

সকল ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা ও তাদের সহচর এবং জ্ঞানীরা মৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবন, পৃথিবীতে সৎকর্মের পুরস্কার ও পাপের শাস্তি সম্পর্কে সবিস্তারে বলে গেছেন। কিন্তু তারা মানুষের মন থেকে মৃত্যুভীতি যেমন দূর করতে পারেননি, অনন্ত সুখের পুরস্কারে প্রলোভিত করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার মতোও কাউকে পাওয়া যায়নি। চরম বিপদের ক্ষণে লোকজনকে ‘ইশ্বর,’ ‘মা’’ ও ‘বাবা’’ এই তিনটি অস্তিত্বের স্মরণ করতে দেখা যায়। তাদের সহায়তায় আমরা বাঁচতে চাই। আমরা মরতে চাই না এবং কখনো মরতে প্রস্তুত নই। দার্শনিক সিগমুন্ড ফ্রয়েডও বিশ্বাস করতেন যে মানুষ কিছুতেই পুরোপুরি মেনে নিতে পারে না যে তাদের মৃত্যু ঘটবে। ফরাসি সাহিত্যিক জিন পল সাত্রে মনে করতেন মৃত্যু সম্পর্কে মানুষের অস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তারা মৃত্যুভীতিতে ভোগে।

বয়স বেড়ে চলার সঙ্গে আমরা খুব সহজে মৃত্যুকে বুঝতে পারে এবং মৃত্যুর ধারণার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করি। ব্যতিক্রমী কিছু না ঘটলে আমরা শৈশবে, হয়তো তিন—চার বছর বয়সেই আমাদের পরিবারের বয়োবৃদ্ধ দাদা—দাদির মৃত্যু দেখতে পাই এবং আমরা মৃত্যুর সঙ্গে পরিচিত হই। যে লোকটি মরে যান, তিনি আর ফিরে আসেন না। আমরা তার অনুপস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠি। ধীরে ধীরে এমন ধারণার উন্মেষ হওয়াও বিচিত্র নয় যে মরে যাওয়া বৃদ্ধ লোকটিও একসময় আমাদের মতো শিশু ছিল, তিনি বেড়ে ওঠেছেন, বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন। একই সাথে আমরা বুঝতে শিখি যে একদিন আমরাও বড় হবো, সময়কে থামিয়ে দেয়া যাবে না, ঘুরিয়েও দেয়া যাবে না এবং আমরা বেড়ে ওঠতে ওঠতে এক পর্যায়ে মারা যাব।

অতএব মৃত্যু যখন দরজায় টোকা দেয় তখন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। যতোদিন বেঁচে আছি, দু:খ ও অনুশোচনাহীন হয়ে বাঁচা উচিত। মৃত্যুকে অশুভ কিছুর সঙ্গে তুলনা করা পরিহার করতে পারলেই আমরা জীবনকে উপভোগ করতে শিখবো, উদ্যমের সঙ্গে কাজ করতে পারব। পাশ্চাত্য সভ্যতা মৃত্যুতে ভয় পায়। কারণ তাদেরকে তাদের সম্পদ আঁকড়ে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে শেখানো হয়। তাদের পার্থিব চিন্তাভাবনায় জীবনও একটি পন্য, যা তারা ধারণ করে রাখতে পছন্দ করে এবং জীবনকে চলে দিতে চায় না। মজার ব্যাপার হলো পাশ্চাত্যে কেউ যখন মারা যায় তখন সবচেয়ে ধার্মিক লোকজনও দু:খ অনুভব করে। তারা আধ্যাত্মিক বিশ্বাসকে ফাঁকি দিয়ে জীবনকে পার্থিব সম্পত্তি হিসেবে ধরে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু একটি অংশ মনে করে, ‘জীবন কোনো সম্পত্তি বা আহরণযোগ্য অস্তিত্ব নয়, বেঁচে থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কে কতোদিন বেঁচে থাকবে তার ওপর কারও নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু মানুষ জীবনের ব্যবস্থাপনা স্থির করতে এবং মৃত্যুর সঙ্গে সমঝোতা করে নিতে পারে। কারও মাঝে মৃত্যুভীতি জেঁকে বসলে তার পক্ষে আর সুস্থভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না এবং অনেক ক্ষেত্রে জীবন যন্ত্রণাময় হয়ে ওঠে।

সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা জীবনের শেষ ধাপে পেঁৗছৈ জীবনের মর্ম নিয়ে নিজেকেই প্রশ্ন করে এবং মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে কারও ধারণাকে নিজের মাঝে প্রতিষ্ঠা করে নেয়। আমরা কর্মজীবন থেকে অবসরগ্রহণকারী লোকজনকে সহসা ধার্মিক হয়ে ওঠতে, দাড়ি রাখতে, পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত লম্বিত ঢিলেঢালা জামা ও মাথায় টুটি পড়তে, তসবিহ ঘোরাতে, তাবলিগের ইজতেমায় যোগ দিতে দেখি। সামর্থ থাকলে অনেকে হজ্ব পালন করতে মক্কামুখীও হন। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও তীর্থে তীর্থে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করেন। মানুষের দুর্বলতার মুহূর্তে বা স্পর্শকাতর সময়ে ধর্মাচরণ বা আধ্যাত্মিকতার অনুশীলন তাদেরকে স্বাচ্ছন্দ ও শক্তি দান করতে পারে বলে বিশ্বাস করা হয়। যখন কেউ মনে করে যে মৃত্যু আসন্ন তখন তিনি বহু বছর আগে ছেড়ে দেয়া ধর্মচর্চা শুরু করেন। প্রার্থনা ও ধ্যানের মধ্যে সান্তনা খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু অনেকে আধ্যাত্মিকতার ব্যাপারে আগ্রহী হন না। এ সম্পর্কে বিশ্বের প্রধান ধর্মগুলো মৃত্যু নিয়ে কী বলেছে আমরা সেদিকে দৃষ্টিপাত করলে মজার কিছু তথ্য পেতে পারি্।

ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে দৈহিক মৃত্যুর পর আমাদের আত্মা টিকে থাকে এবং মৃত্যুর ফেরেশতার সাথে গিয়ে শেষ বিচারের দিনের অপেক্ষায় থাকে। শেষ কিচারের দিনে ভালো মানুষদের বেহেশতে এবং পাপীদের জাহান্নামে প্রেরণ করা হবে। অধিকাংশ খ্রিস্টান বিশ্বাস করেন যে যিশুর পুনরুত্থান ঘটবে এবং মানুষের মৃত্যু পরবর্তী একটি জীবনের অস্তিত্ব রয়েছে। মানুষের কর্মের ভিত্তিতে পৃথিবীতেই নির্ধারিত হয় যে তারা স্বর্গ অথবা নরকে গমণ করবে। ক্যাথলিকদের বিশ্বাস হলো, মানুষ স্বর্গে যাওয়ার আগে প্রথমে তাদেরকে অবশ্যই এমন এক স্থান দিয়ে অতিক্রম করতে হবে যেখানে তাদেরকে পাপমুক্ত করা হবে। তবে মৃত খ্রিস্টানের জন্য প্রার্থনা করলে তার পাপমোচন সহজ হবে। মৃত্যুর পর কী ঘটবে সে সম্পর্কে ইহুদিবাদে ধারণা সম্পূর্ণ অস্পষ্ট। অধিকাংশ ইহুদি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাস করে, যা বিভিন্ন অবয়বে আসতে পারে। আবার অনেক ইহুদি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে এবং কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে মৃত্যুর পর তারা এমন এক পৃথিবীতে প্রবেশ করবে যা স্বর্গতূল্য। বৌদ্ধদের বিশ্বাস হলো, মানুষ মৃত্যুবরণ করার পর আরেকটি জীবের দেহে প্রবেশ করবে। মৃত্যুর পর এবং পুনর্জন্মের আগে প্রতিটি ব্যক্তিকে ‘বারদো’ নামে একটি অবস্থার মাঝ দিয়ে অতিক্রম করতে হবে, যা তার জন্য গভীর অন্তদৃষ্টি ও মুক্তির মুহূর্ত। বৌদ্ধদের জন্য নির্বাণ লাভের মধ্য দিয়ে পুনর্জন্মের চক্রকে ভেঙে দেয়াই পরম প্রাপ্তি, যখন সব যন্ত্রণার অবসান ঘটবে। এমন এক আলোকিত অবস্থায় পেঁৗছার উদ্দেশ্যে বৌদ্ধরা ধ্যানের মাধ্যমে মনকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। বৌদ্ধরা যেহেতু মৃত্যুকে নতুন জীবনের সূচনা বলে বিশ্বাস করে, সেজন্য মরণাপন্ন ব্যক্তিকে পরবর্তী জগতে প্রেরণের উদ্দেশে মৃত্যুর প্রক্রিয়াকে যন্ত্রণামুক্ত করতে যৌথভাবে শ্লোক উচ্চারণ করে মৃতপ্রায়ের মনকে প্রশান্ত রাখতে চেষ্টা করে। মৃত্যু ও মৃত্যু পরবর্তী জীবন সম্পর্কে হিন্দুদের বিশ্বাস বৌদ্ধদের বিশ্বাসের অনুরূপ। তারাও পুনর্জন্মে বিশ্বাসী এবং সে পুনর্জন্ম মানুষের আকারে না হয়ে প্রাণী, বৃক্ষ, এমনি কীটপতঙ্গের আকারে হতে পারে।

বৌদ্ধ ধর্মগুরু দালাই লামার মতে, “মৃত্যুর ধারণা ভীতি উদ্রেককর কিছু নয়, বরং যে মূল্যবান জীবন অতিক্রান্ত হচ্ছে সে জীবনকে প্রশংসা করার। আমরা যখন মৃত্যুকে ভয় করি, তখন আমরা জীবনকে থামিয়ে দেই।”

আমরা জীবিত থাকতে মৃত্যুর হাত থেকে অজেয় বা অমর ভাবতে পছন্দ করি। কিন্তু মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তা পরিহার করলেই আমাদের জীবন চিরস্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই। ‘আমি মরছি না’’ এ ধরনের ভাবনা পোষণ করে আমরা অত্যন্ত আসলে নাজুক একটি সত্যের মুখোমুখি হওয়াকে এড়িয়ে যেতে চাই। অথচ জীবনের অবশ্যম্ভাবী সত্য হচ্ছে, ‘আমাদের জীবন কত অনিশ্চিত।’ আমরা মৃত্যু চিন্তা এড়িয়ে চলি, কিন্তু আমরা নীরবতাকে ভয় করি। “আচ্ছা, আগামীকালই যদি আমার মৃত্যু ঘটে?” প্রশ্নটি আমাদেরকে সকল দু:শ্চিতা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। কারণ মৃত্যুচিন্তা আমাদের অবচেতন মন থেকে কখনও অপসারিত হয় না। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর বার্নার্ড রথ তাঁর ছাত্রদের বলতেন: “কল্পনা করো যে তুমি আর মাত্র ১০ মিনিট, ১০ দিন, ১০ মাস অথবা ১০ বছর জীবিত থাকবে, তাহলে জীবনের অবশিষ্ট সময়টুকুতে তোমরা কী করবে?” উত্তর দিতে ছাত্ররা সময় নিতো। কেউ তাদের জীবনের ধারণাগুলো নিয়ে অনুশোচনা করতো। কেউ তাদের অনিস্পন্ন কাজের জন্য দু:খ প্রকাশ করতো। তবে প্রত্যেকে তাদের জীবনের শেষ ১০ মিনিট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটাতে চাইতো। এই অনুশীলনে ছাত্ররা উপলব্ধি করতে শিখেছিল যে জীবনের চেয়ে সম্ভাব্য মৃত্যুর প্রতিফলন কতটা শক্তিশালী এবং এই অনুশীলনের মাধ্যমে বানার্র্ড তাঁর ছাত্রদেরকে উপলব্ধি করাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার মুহূর্তগুলো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রাখা উচিত। বৌদ্ধ ধর্ম মৃত্যুর ওপর ধ্যানকে অধিক গুরুত্ব দেয়, প্রথমত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার পদ্ধতি হিসেবে এবং দ্বিতীয়ত মৃত্যুবরণের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে। অনেকের কাছে এ ধারণা অবাস্তব মনে হলেও এই সত্য তো অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, মৃত্যুকে অস্বীকার করলেও মৃত্যুর আগমণ অবরুদ্ধ হবে না।

মহাযান বৌদ্ধ মতবাদের মহান গুরু আচার্য জাসেপ তুলকু রিনপোচে (Zasep Tulku Rinpoche) বলেছেন, “জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। যে কোনো সময় মৃত্যু ঘটতে পারে। কেউ জানে না, কখন। আমরা বৃদ্ধে পরিণত হই, কিন্তু কখন আমাদের চলে যেতে হবে আমরা তা জানি না। আমি হয়তো আর ১০ বছর, ১৫ বছর অথবা ২০ বছর জীবিত থাকব। সময় দ্রুত কেটে যায় এবং মৃত্যু দ্রুত বা একটু বিলম্বে আসে।” মৃত্যু একই সঙ্গে অনিবার্য এবং অনিশ্চিত। আমরা জানি মৃত্যু আসবে, কিন্তু জানি না কখন আসবে। আমাদের শরীর, আমাদের সমগ্র অস্তিত্ব অত্যন্ত ভঙ্গুর। শুধু আধ্যাত্মিক শিক্ষার অনুশীলন আমাদের মনকে সত্যকে অস্বীকার করার পরিবর্তে সত্য মেনে প্রশিক্ষণ দিতে পারে। কেউ যদি মৃত্যু নিয়ে সন্দিহান থাকে তাহলে তারা তিব্বতের এক বৌদ্ধ গুরুর উক্তি থেকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার পরামর্শ নিতে পারেন। তিব্বতি লাম চাগদুদ রিনেপোচে (Chagdud Rinpoche) কিছুটা রুক্ষ ভাষায় বলেছেন: “তোমাকে যখন বাথরুমে যেতে হবে, তখন পায়খানা নির্মাণ করার সময় থাকবে না।” অতএব অধিক বিলম্ব হওয়ার আগেই মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শুরু করা অপরিহার্য। প্লেটো তাঁর অ্যাপোলজিতে লিখেছেন, হে আমার বন্ধুগণ, আমরা বিজ্ঞ না হয়েও শুধু মৃত্যুর ভয় সম্পর্কে চিন্তা করেই জ্ঞানী হতে পারি। কারণ এটি এমন এক চিন্তা, যে চিন্তার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে আমরা আসলে কিছুই জানি না। যেহেতু কেউ জানে না যে, মৃত্যু মানুষের জন্য বড় ধরনের কল্যাণের কোনো কিছু নাও হতে পারে।”

Published in Uncategorized

১৫ Comments

  1. Read more. Really looking forward to reading more. Great blog.

  2. Your blog post resonated with me on so many levels. Thanks again for the great read. Looking forward to your future posts!

  3. qMtQbfOavoRINELU

  4. cVaWdkmjwCrNFfEx

  5. That is really fascinating, You are an overly skilled bloggerI’ve joined your feed and stay up for seeking more of your magnificent postAlso, I’ve shared your site in my social networks

  6. I would like to show my appreciation to this writer for rescuing me from this particular instance. Because of researching through the the net and getting methods which are not helpful, I was thinking my entire life was well over. Living devoid of the answers to the issues you have solved through your guideline is a serious case, and ones which might have in a wrong way affected my entire career if I hadn’t come across your blog. Your own personal know-how and kindness in controlling all the things was crucial. I’m not sure what I would have done if I had not come upon such a stuff like this. I am able to at this point look ahead to my future. Thank you so much for your impressive and sensible help. I won’t think twice to suggest the sites to any individual who ought to have direction about this topic.

  7. I have read some good stuff here. Definitely value bookmarking for revisiting. I wonder how a lot effort you place to create any such fantastic informative website.

  8. What¦s Going down i’m new to this, I stumbled upon this I have found It absolutely helpful and it has helped me out loads. I’m hoping to give a contribution & help different customers like its aided me. Great job.

  9. I would like to convey my passion for your kind-heartedness supporting those people who must have help on this important concept. Your real dedication to getting the solution along ended up being surprisingly effective and have in most cases made associates much like me to attain their targets. Your own warm and friendly instruction denotes much a person like me and extremely more to my mates. With thanks; from all of us.

  10. Thanks for sharing superb informations. Your web-site is so cool. I’m impressed by the details that you’ve on this website. It reveals how nicely you understand this subject. Bookmarked this web page, will come back for extra articles. You, my friend, ROCK! I found simply the information I already searched all over the place and simply could not come across. What a perfect website.

  11. Someone necessarily help to make seriously articles I would state. That is the very first time I frequented your web page and thus far? I surprised with the research you made to make this particular post incredible. Fantastic task!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *