Skip to content →

এক বছরের পাপ মোচনের সহজ তরিকা


সাড়ে চার মাস পর জুমা নামাজ পড়তে গেলাম। পাকিস্তানিদের পরিচালিত মসজিদ হলেও মুসল্লিদের ৮০ শতাংশই বাংলাদেশী। মাঝে মাঝে ওই মসজিদে যাই, আজও গেলাম। কিন্তু বেসুরো গলায় আজান ভালো লাগলো না। সেই কবিতা মনে পড়লো: “কে মোরে শোনালো ওই আজানের ধ্বনি/মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সমুধুর/আকুল হইল প্রাণ, নাচিলো ধমণী।” মুয়াজজিনের বেতাল কণ্ঠের আজানে আমার প্রাণ আকুল হয়নি, ধমণীও নাচেনি। আজান সুরেলা হওয়া উচিত। ততোধিক গোলমেলে বয়ান শুনে পুরোনো দিনে শোনা এক কাহিনি মনে পড়লো: “গ্রামে এক লোকের গরু মসজিদে ঢুকে পড়েছে। ইমাম সাহেব গরুটিকে কোনোমতে ধরে মসজিদের বাইরে খুটির সাথে বেঁধে রেখেছেন। সন্ধ্যায় গরু ঘরে না ফেরায় গরুর মালিক খুঁজতে খুঁজতে মসজিদের বাইরে গরুটিকে বাঁধা দেখতে পেলেন এবং ইমাম সাহেবকে বললেন গরুটি ছেড়ে দিতে। ইমাম সাহেব লোকটিকে বকাঝকা করলেন, ‘গরু সামলে রাখতে পারো না। মসজিদে ঢুকে অপবিত্র করেছে। এটিকে খোয়াড়ে দেব’ ইত্যাদি। লোকটি বিনয়ের সাথে বলে, ‘হুজুর গরু অবুঝ প্রাণী, কিছু বোঝে না। তাই হয়তো মসজিদে ঢুকে পড়েছে। কথা দিচ্ছি, আর ঢুকবে না। আমি মানুষ, আমি বুঝি, আমাকে কখনো মসজিদে ঢুকতে দেখেছেন?” খুতবা দাতার বয়ানে আমারও মনে হলো, যারা বোঝে না তারাই ভুল করেই মসজিদে ঢুকে। দুনিয়া কোথা থেকে কোথায় চলে গেছে, আর নতুন হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহররমের প্রথম দিনের ফজিলত শুনে মানুষ কতোটা এগোতে পারবে? বয়ানের ভাষা ইংরেজি। আমেরিকায় বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য সঠিক ভাষা। কিন্তু মূল বয়ানের আগে পিছে দীর্ঘ সময় জুড়ে আরবি কথন কার বোধগম্য? অবশ্য সেগুলো ছিল আল্লাহর প্রশংসাসূচক কথা। আল্লাহর জন্য আরবি, মুসল্লিদের জন্য ইংরেজি। উভয় অংশ সকলের বোঝার ভাষায় বললে অসুবিধা কোথায়? আল্লাহ কী ইংরেজি ভাষা বুঝবেন না?

করোনা’র কারণে জুন মাস পর্যন্ত মসজিদগুলো বন্ধই ছিল। যে কোনো সমাবেশস্থলের চিত্র অভিন্ন ছিল। মসজিদে ছয় ফুট দূরে দূরে দাঁড়াতে-বসতে হবে। শৈশব থেকে কী ওয়াজ শুনে এসেছি? জামাতের কাতারে দাঁড়াতে হবে পাশের প্রত্যেক মুসল্লির পায়ের কড়ে আঙুলের সঙ্গে আঙুল লাগিয়ে, কাঁধের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে। নামাজ শুরুর আগে ইমাম সাহেব পরখ করেছেন মুসল্লিরা তা করেছে কিনা। কাতার সোজা না করলে যে নামাজ শুদ্ধ হয় না তা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজনে উষ্মা প্রকাশ করতেও ছাড়েননি। মুসল্লিরাও নামাজ ছহি করার জন্য চেষ্টার ত্রুটি করেনি। এর ব্যতিক্রম কখনো কিছু শুনিনি। কিন্তু করোনাকালে সব উল্টাপাল্টা হয়ে গেছে। যা কখনো শুনিনি, তাই শুনতে হচ্ছে। কোন্ কিতাবে দূরে দূরে দাঁড়ানোর মসলা-মাসায়েল আছে, এখন তারা খুঁজে খুঁজে সেগুলো বের করছেন। এসব দেখে শুনে মনে মনে বলি, ‘হে ওপরওয়ালা, মুঝে উঠা লে।’

ইমাম সাহেবের খুতবা শুনে বা তাঁর ইমামতিতে নামাজ আদায় করে কার কতোটুকু কী হাসিল হলো, জানি না। তবে আমারঅর্জন একটি কাহিনি। হয়তো আমিও আগে শুনে থাকবো, মনে রাখতে পারিনি। মদিনা প্রধানত একটি ইহুদি অধ্যুষিত শহর ছিল। হিজরতেও সময়ও তাই। রাসুলুল্লাহ যখন মদিনায় গেলেন তখন ইহুদিদের আশুরার দিনে অর্থ্যাৎ মহররম মাসের দশ তারিখে উপবাস করতে দেখলেনা। তিনি জানতে চাইলেন, তোমরা আশুরার দিনে উপবাস পালন করো কেন? তারা বললো, ওইদিন ফেরাউনের হাত থেকে মুসা ও তাঁর অনুসারীদের বাঁচাতে ইশ্বর সমুদ্র বিভাজন করে দিয়েছিলেন। মুসা ওইদিন উপবাস করতেন, তাই ইশ্বরের প্রতি শুকরিয়া জানাতে আমরাও উপবাস পালন করি।’ তখন নবী বললেন, ‘তোমাদের চেয়ে আমি মুসার অধিক নিকটবর্তী।’ তিনি আশুরার দিন রোজা রাখলেন এবং তাঁর অনুসারীদের রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।
আমি অতো বুঝি না, আমার মতো আরও অনেকেই বোঝেন না। আমি সোজা পথে, অল্পের মধ্যে বেশি পেতে চাই। হাদিসে বলা হয়েছে, আশুরার দিন রোজা রাখলে বিগত এক বছরের সকল গুনাহ মার্জনা হয়ে যাবে। মাশাআল্লাহ! কি পাপ করে মার্জনা লাভের কী সহজ তরিকা। পাপ করে সহজ মুক্তির উপায়!
হিতোপদেশ: বছর জুড়ে পাপ করুন, আশুরার দিনে রোজা রেখে পাপ মোচনের সুযোগ নিন।

Published in Uncategorized

Comments are closed.