Skip to content →

নিটশে’র “দ্য গে সায়েন্স” এবং ইশ্বরের মৃত্যু তত্ত্ব

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

 

ইশ্বরের মৃত্যু সম্পর্কে জার্মান দার্শনিক ফ্রেডারিক নিটশে’র সংশয়বাদী তত্ত্ব উনিশ শতকে যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল এখনো সে বিতর্কের অবসান ঘটেনি। তাঁর এ ধারণার ভিত্তি হচ্ছে, মানুষ আলোকপ্রাপ্ত হয়ে ওঠার সঙ্গে ইশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা নির্মূল হয়েছে বলে তিনি যে ধারণা পোষণ করেন তা ব্যক্ত করার উদ্দেশে তিনি বলেছেন “`”ইশ্বর মৃত।” তবে ”ইশ্বরের মৃত্যু” তত্ত্বের প্রবল প্রবক্তারা নিটশের ধারণার সঙ্গে সামান্য ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন এক পর্যায়ে খ্রিস্টান ইশ্বরের অস্তিত্ব থাকলেও এখন তিনি আর নেই। নিটশের পুরো বক্তব্য হচ্ছে, ”ইশ্বর মৃত। ইশ্বর মৃতই আছেন এবং আমরাই তাঁকে হত্যা করেছি। আমরা যারা সকল খুনির মাঝেও খুনি, তাদের পক্ষে কীভাবে পরিতৃপ্ত থাকা সম্ভব? যিনি ছিলেন পবিত্রতম এবং পৃথিবীতে ছিলেন প্রচন্ড ক্ষমতাধর, আমরা আমাদের ছুরির আঘাতে তাঁকে হত্যা করেছি, এই রক্ত কে মুছবে? এমন কোন্ পানি আছে, যা দিয়ে আমরা আমাদের পরিচ্ছন্ন করবো? আমাদের শুধরানোর জন্য কোন্ উৎসব আছে, আমাদেরকে কোন্ পবিত্র খেলার উদ্ভাবন করতে হবে? এই কর্মের মহত্ব কি আমাদের জন্য অতি বিরাট নয়? আমরা কী আমাদেরকে ইশ্বরে পরিণত করার মতো উপযুক্ত করে তুলতে পারি না?”

 

ফ্রেডারিক নিটশের কথাগুলো ১৮৮২ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় ”দ্য গে সায়েন্স” নামে তাঁর নিবন্ধ সংকলনে। গ্রন্থটির ইংরেজি নাম অনেককে চমকে দেবে যে এটি ”সমকামমূলক” বিষয়ের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ-কেন্দ্রিক কোনো গ্রন্থ কিনা। জার্মান ভাষায় নিটশে’র গ্রন্থের নাম ”ডাই ফ্রহলিশে উইজেনশাফট”  (Die fröhliche Wissenschaft), যাকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে ”দ্য গে সায়েন্স” হিসেবে এবং অনেকে এই গ্রন্থটির ব্যাখ্যামূলক নাম দিয়েছেন ”জ্ঞান ও উপলব্ধির আনন্দময় উদ্যোগ” (The Joyful Pursuit of Knowledge and Understanding) অথবা ”আনন্দপূর্ণ জ্ঞান বা আনন্দপূর্ণ বিজ্ঞান” (The Joyful Wisdom or The Joyous Science)।  ”গে” শব্দটি যখন থেকে ব্যাপকভাবে পুরুষ ”সমকামী” অর্থে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে, তার আগে এই শব্দটি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হতো। ইংরেজিতে ”গে” (Gay) শব্দটির ব্যবহার অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষণমূলক এবং অভিধানে যা আছে তা কোনোভাবেই ”সমকামী” অর্থে প্রয়োগের সুযোগ নেই।  

 

ইংরেজি অভিধানে ‘গে’র সমার্থবোধক শব্দগুলোর মধ্যে রয়েছে: Light-hearted বা হাসিখুশি, carefree  –  ভাবনাহীন, active – সক্রিয়, brisk – চটপটে, jaunty – ফূর্তিবাজ, peppy – উদ্যমী, energetic – প্রাণশক্তিসম্পন্ন, jazzy — জমকালো, perky – দাম্ভিক/আমুদে, pert  – ধৃষ্ট, vivacious – উচ্ছসিত, kinetic Ñ গতিময়, zippy Ñ প্রাণোচ্ছল, spirited Ñ চেতনাদীপ্ত, pizazzy – তেজস্বী/আগ্রহী, ইত্যাদি। ইংরেজি বাক্য He is in a gay mood এর অর্থ দাঁড়ায় ”সে ফুরফুরে মেজাজে আছে,’ অথবা A bird’s gay spring song এর অর্থ ”একটি পাখির বসন্তের সমধুর বসন্তের গান।”

১৯৬০ এর দশকে সমকামীরা নিজেদেরকে ”গে” হিসেবে বর্ণনা করতে প্রাধান্য দেওয়ার পর থেকে ”গে’ শব্দটি ”সমকামী” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় এবং এখন সমগ্র বিশ্বে ”গে” বলতে পুরুষ “সমকামী” ছাড়া আর কিছু বোঝায়না। ”গে’র অন্যান্য বিশেষণমূলক প্রয়োগ এখন আর নেই বললেই চলে। নারী সমকামীদের ক্ষেত্রে ”লেসবিয়ান” শব্দটির প্রয়োগ হলেও কোনো কোনো প্রেক্ষাপটে তাদের ক্ষেত্রে ”গে” শব্দের প্রয়োগ রয়েছে। অতএব নিটশের গ্রন্থের ইংরেজি নামকরণের সঙ্গে প্রচলিত অর্থে ব্যবহৃত ”গে” শব্দের কোনো সম্পর্ক নেই।

 

ইতিহাস জুড়ে বিজ্ঞান ও দর্শনের সম্পর্ক অত্যন্ত জটিল ছিল। সত্যের সন্ধান দিতে দর্শন যেখানে ব্যর্থ হয়েছে, তখন মানুষ সত্য অনুসন্ধানে বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হয়েছে। বর্তমানে যে কোনো দার্শনিকের কাছে স্পষ্ট যে বিজ্ঞান ও দর্শন দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের সত্যের সন্ধান করে। কিন্তু নিটশের সময়ে মানুষ জানতে চাইতো যে কোন্টি তুলনামূলকভাবে অধিক সত্য। মানুষ এমন ভেবে ভুল করে যে বিজ্ঞানের সত্যানুসন্ধান অধিক প্রত্যক্ষ এবং এর ফলে দর্শন মানুষের সমর্থন ও মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। নিটশের সমালোচকদের বিশ্বাস বিজ্ঞানেই সকল উত্তর রয়েছে। নিটশের উচ্ছাস ও স্বস্থির অংশের মধ্যে বিজ্ঞানিরা সত্য খুঁজে পেয়েছেন, যা দর্শন পারেনি। বিজ্ঞান যেহেতু সত্যকে বিজ্ঞানের বিষয়ে পরিণত করেছে, সেজন্য নিটশের ‘গে’ অথবা উচ্ছাস বা আনন্দ ব্যঙ্গার্থে ”অভিনন্দন” হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এরপর থেকে সত্যের জন্য বিজ্ঞান আর কারও দ্বারস্থ হয়নি। বাস্তবে এখন দর্শন একই সত্য খুঁজতে বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী থাকে। সে বিচারে দর্শনকে কখনো বিজ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয় বলে আধুনিক বিজ্ঞানিদের অভিমত।

 

১৯৬৬ সালের ৮ এপ্রিল ’টাইম ’ ম্যাগাজিনের কভার স্টোরি ”ইশ্বর কি মৃত?” প্রকাশিত হওয়ার সাড়ে সাত মাস আগে একই ম্যাগাজিনের ১৯৬৫ সালের ২২ অক্টোবর সংখ্যায় `”ধর্ম”  বিভাগে ”ধর্মতত্ত্ব : ইশ্বর মৃত আন্দোলন” (Theology: The God Is Dead Movement) শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। নিবন্ধে ফরাসি অস্তিত্ববাদী দার্শনিক ও সাহিত্যিক জিন পল সাত্রের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়: ”আমাদের স্বীকার করতে হবে যে ইশ্বরের মৃত্যু একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। আমাদের সময়েই, আমাদের ইতিহাসে, আমাদের অস্তিত্বে ইশ্বরের মৃত্যু ঘটেছে।” তাঁর বক্তব্য অনেককে মর্মাহত করেছে, যা তিনি না হয়ে সাধারণ কোনো দার্শনিক বা স্বঘোষিত নাস্তিকের বক্তব্য হলে খ্রিস্ট জগতের পন্ডিতরা এতোটা ব্যথিত হতেন না। কিন্তু ইশ্বরের অস্তিত্বহীনতার বিতর্ক শেষ হয়নি। আমেরিকান প্রোটেস্টান্ট শিবিরে এখনো এ বিতর্ক বিদ্যমান এবং স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রচলিত ধারণাকে পুরনো ও অসার ধারণা বলেও যুক্তি দিতে দ্বিধা করে না। তারা বলেন, ”মানব ইতিহাসের সর্বক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করেন এমন একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইশ্বরের ধারণা পোষণ বা বিশ্বাস করা আদৌ সম্ভব নয় এবং তাঁকে ছাড়া খ্রিস্টবাদ টিকে থাকবে না — এ ধারণারও কোনো ভিত্তি নেই।”

 

পঞ্চাশের দশকে ইন্ডিয়ানার ওয়াবাশ কলেজে ধর্মতত্বে শিক্ষকতার সময় থমাস আলটিজার নতুন ধরনের “ইশ্বরহীন খ্রিস্টবাদকে এককভাবে আমেরিকান ধ্যানধারণা বলে বর্ণনা করেছেন। বিংশ শতাব্দীর ডেনিশ ধর্মতত্ত্ববিদ সোরেন কার্কেগার্দ ইশ্বরের মৃত্যুর ধারণা ব্যাপ্তি দান করতে গিয়ে বলেছেন যে বর্তমানে সংগঠিত খ্রিস্টবাদ এক ধরনের মূর্তি পূজার বিকাশ ঘটিয়েছে এবং যিশুর বাণীকে অস্পষ্ট করে ফেলেছে। তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বিরোধী শহীদ ডিয়েটিচ বনহোফারের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে, যিনি তাঁর কারাকক্ষের প্রাচীরে লিখে গেছেন যে চার্চগুলোর উচিত বাইবেলের ধারণার ধর্মহীন ব্যাখ্যার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। তিনি আরো লিখেছেন যে যুগের চাহিদা মেটাতে ধর্মনিরপেক্ষতার বিকাশ ঘটছে, যেখানে সূর্য এবং নক্ষত্র সম্পর্কিত ব্যাখ্যা প্রদান অথবা মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সমাধান খুঁজতে ইশ্বর আর আবশ্যকীয় কোনো অস্তিত্ব নয়।

‘টাইম’ এর নিবন্ধে আরো বলা হয়েছে: ”ইশ্বরের মৃত্যু ঘোষণা এই নতুন প্রগতিশীল ধর্মতত্ত্বের নেতিবাচক সূচনা মাত্র। এই ধর্মতাত্ত্বিকরা ইশ্বরকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে খ্রিস্টধর্মের অন্যান্য মতবাদকে পুন:সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং আলটিজার ছাড়াও এ আন্দোলনের প্রবক্তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন: টেম্পল ইউনিভার্সিটির পল ভ্যান বুরেন, কোলগেট রচেস্টার ডিভাইনিটি স্কুলের উইলিয়াম হ্যামিলটন ও সাইরাক্যুজ ইউনিভার্সিটির গ্যাব্রিয়েল ভাহানিয়ান।” নিবন্ধে আলটিজারের ইশ্বরহীনতার যুক্তি উল্লেখ করে বলা হয়েছে: ”মধ্যযুগে পবিত্রতার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোর ওপর মানুষের আর আস্থা নেই। এখন মানুষ ইশ্বরকে মানুষের জীবনে ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে খ্রিস্টানদের উচিত আধুনিক বিশ্বের ধর্মনিরপেক্ষকরণকে স্বাগত জানানো।”

 

আলটিজার তাঁর ”দ্য গসপেল অফ ক্রিশ্চিয়ান এথিজম” গ্রন্থে বিশ্লেষণ করেছেন যে ইশ্বরের মৃত্যু অনিবার্যভাবে ধর্মান্ধতা থেকে মুক্তি। গ্যাব্রিয়েল ভাহানিয়ান আরো এক ধাপ এগিয়ে বলেছেন, ”যে ইশ্বরকে মানুষ তার পরিচিত একজন বলে জানে, তাহলে সে ইশ্বর তার নিজের সংস্কৃতির মধ্যে আছে এবং সেটি মূলত একটি প্রতিমূর্তি। ধর্মতাত্ত্বিক বিবেচনায় ইশ্বর সম্পর্কিত কোনো ধারণা একটি অনুমান মাত্র। ইশ্বর সম্পর্কে ধারণা শুধু ইশ্বরেরই থাকতে পারে। ইশ্বর সম্পর্কে চার্চের বর্তমান ধারণা প্রাথমিক যুগের খ্রিস্টবাদ ও গ্রিক দর্শনের মধ্যে সংঘাত থেকে উৎসারিত। একটি মূর্তি ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতির সঙ্গে এখন আর সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না এবং ইতোমধ্যে তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। অতএব ইশ্বর মৃত এবং চার্চগুলো কাঠামোগত ও চিন্তাভাবনার দিক থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ধর্মনিরপেক্ষ না হওয়া পর্যন্ত ইশ্বর মৃতই থাকবেন।”

 

অনেক ইশ্বর-মনস্ক প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান চিন্তাবিদও ইশ্বরের মৃত্যুর আন্দোলনের যৌক্তিকতা স্বীকার করছেন। তারা ইশ্বর সম্পর্কিত প্রতীকি সকল শব্দ ব্যবহার পরিহার করেছেন। তারা বলছেন যে আসলে ইশ্বরের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং যিশু প্রাপ্ত পুত্র ছাড়া কিছু নন। তবে অনেক ধর্মপ্রাণ প্রোটেস্টান্টের অভিযোগ হচ্ছে, ”ইশ্বরের মৃত্যুর ধারণা সৃষ্টিকারীরা খ্রিস্টধর্মকে শুধুমাত্র যিশু দ্বারা অনুপ্রাণিত এক ধরনের নৈতিক মানবতাবাদে পরিণত করেছে, যা বাইবেলের শিক্ষার সম্পূর্ণ বিরোধী।” যারা এখনো ইশ্বরের সঙ্গে রয়েছেন, তারা নিটশের বক্তব্য থেকেই ইশ্বরের মৃত্যু নিয়ে সংশয়ের উত্তর দিতে পছন্দ করবেন।

”ইশ্বর মারা গেছেন!” : স্বাক্ষর : নিটশে।

 ”নিটশে মারা গেছেন” : স্বাক্ষর : ইশ্বর।

Published in Uncategorized

২৩ Comments

  1. This is a truly excellent blog. Really looking forward to more reads. Absolutely fantastic.

  2. Great blog. Read more. Really looking forward to reading more.

  3. Really looking forward to reading more. Reading more. Great blog.

  4. QMtveYufkPUFnIZo

  5. You’ve done an impressive work on your website in covering the topic. I am working on content about Nonprofit Organizations and thought you might like to check out Webemail24 and let me what you think.

  6. It is always great to come across a page where the admin take an actual effort to generate a really good article. Check out my website Seoranko concerning about SEO.

  7. I consider this a genuinely great blog. Really looking forward to more reads. Truly excellent.

  8. An excellent read that will keep readers – particularly me – coming back for more! Also, I’d genuinely appreciate if you check my website ArticleHome about Event Organization. Thank you and best of luck!

  9. This is top-notch! I wonder how much effort and time you have spent to come up with these informative posts. Should you be interested in generating more ideas about Website Traffic, take a look at my website Article Sphere

  10. Labai patiko rankų ir pažastų depiliacija Klaipėdoje. Procedūra buvo greita ir neskausminga, o rezultatai ilgalaikiai. Labai džiaugiuosi pasirinkimu! Registruokis dabar.

  11. Every weekend i used to pay a visit this site, asi want enjoyment, since this this web page conations in fact pleasant funny materialtoo

  12. I think this is a genuinely great blog. Really looking forward to more reads. Truly fantastic.

  13. Really looking forward to reading more. Read more. Great blog.

  14. In my opinion, this blog is really great. Excited to read more. Absolutely fantastic!

  15. Profesionalus aptarnavimas ir greitas rezultatas, labai rekomenduoju! Depiliacija vašku Klaipėdoje tikrai verta, oda tapo minkšta ir be plaukelių. Registruokis dabar.

  16. Po rankų ir pažastų depiliacijos vašku mano oda atrodo nepriekaištingai. Procedūra buvo greita ir efektyvi, o rezultatai ilgalaikiai. Labai rekomenduoju! Registruokis dabar.

  17. vEGMVLgrHuhNbSYQ

  18. I don’t even know how I ended up here, but I thought this post was great. I do not know who you are but certainly you are going to a famous blogger if you aren’t already 😉 Cheers!

  19. Very efficiently written information. It will be supportive to anyone who employess it, including yours truly :). Keep doing what you are doing – can’r wait to read more posts.

  20. Wow that was strange. I just wrote an very long comment but after I clicked submit my comment didn’t appear. Grrrr… well I’m not writing all that over again. Anyways, just wanted to say superb blog!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *